আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারী, দেশের শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি- কুমিল্লায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম রূপকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে নির্মিত একটি ম্যুরাল কতিপয় দুর্বৃত্তের দ্বারা ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি নিছক একটি শিল্পবস্তুর ক্ষতিসাধন নয়, বরং ভাষা শহীদদের প্রতি অবমাননা এবং আমাদের স্বাধীনতা, ইতিহাস ও সংস্কৃতি-বোধের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি নগ্ন অপতৎপরতা। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার।
প্রয়াত রফিকুল ইসলাম ছিলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। তাঁর চিন্তা ও সক্রিয় প্রচেষ্টাতেই ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা আজ বিশ্বজুড়ে মাতৃভাষার প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক। ম্যুরাল ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে এই কর্মবীরের প্রতি এহেন অবমাননাকর আচরণ আমাদের জাতিগত গৌরব, বোধ এবং বিবেককে আহত করেছে। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে নির্মিত প্রতিটি স্মৃতিচিহ্ন আমাদের ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই প্রতীকের ওপর আঘাত হানা মানে আমাদের অস্তিত্ব ও মানবিক মূল্যবোধে আঘাত হানার শামিল। আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারকসমূহের ওপর ধারাবাহিক হামলা ও ভাংচুর উদার গণতন্ত্র ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তের লক্ষণ। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো- বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের পরিবারের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ম্যুরালটি নির্মিত ও স্থাপিত হলেও ভাঙচুর রোধে কিংবা পরবর্তীতে ভাংচুরকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন হিরন্ময় নিরবতা পালন করছে। যা আমাদের বীর-সন্তানদের সম্মানিত করা এবং হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রশাসনযন্ত্রের স্বদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাব বলেই প্রতীয়মান হয়।
আমরা আরও লক্ষ্য করেছি, রাজধানীর বিজয় সরণিতে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’-এর সাতটি স্থাপনা ভেঙে সেখানে ‘জুলাই গণমিনার’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের দৃঢ় মত- জুলাই চেতনাকে ধরে রাখতে এমন প্রতীক গড়ার প্রয়াস রাজধানীর যেকোনো উন্মুক্ত স্থানে নেওয়া যেত। সেজন্য পূর্বস্থিত জাতীয় ঐতিহ্যের স্মৃতিস্মারক ভেঙে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন ছিল না।
আমরা এইসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসমূহের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক আমাদের অহংকারের প্রতীক, তা রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। সেই দায়িত্বের অংশ হিসেবে আমরা রফিকুল ইসলামের ম্যুরাল সহ অন্যান্য ম্যুরাল ও স্মৃতিস্মারক ভাঙ্গার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে সম্মতি দিয়েছে, যথাক্রমেঃ
১. এম এম আকাশ, অর্থনীতিবিদ
২. বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক
৩. বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান, কথাসাহিত্যিক
৪. জাকির তালুকদার, কথাসাহিত্যিক
৫. সালাহউদ্দিন বাদল, কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
৬. অজয় দাশগুপ্ত, সাংবাদিক ও লেখক
৭. বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, বিশিষ্ট শিল্পী
৮. বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুর রহমান, কথাশিল্পী ও বিটিভির সাবেক ডিডিজি
৯. ড. মকবুল হোসেন, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী
১০. শাহেদ কায়েস, কবি ও মুক্তচিন্তক
১১. সরকার আবদুল মান্নান, কবি ও প্রাবন্ধিক
১২. সন্তোষ রায়, কবি ও প্রাবন্ধিক
১৩. শওগাত আলী সাগর, প্রবাসী সাংবাদিক
১৪. রফিকুর রশীদ, কথাসাহিত্যিক
১৫. ঝর্ণা রহমান, কথাসাহিত্যিক
১৬. সেজান মাহমুদ, কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী
১৭. ডা. আতিকুল হক, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
১৮. ড. মুকিদ চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক ও গবেষক
১৯. হোসেন দেলওয়ার, কবি
২০. মোজাম্মেল হক নিয়োগী, কথাসাহিত্যিক
২১. গোলাম মোর্শেদ চন্দন, কবি
২২. মোহাম্মদ আনওয়ারুল কবীর, কবি, গল্পকার ও অধ্যাপক
২৩. হামীম কামরুল হক, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক
২৪. শামীম আশরাফ, শিক্ষক
২৫. স্বকৃত নোমান, কথাসাহিত্যিক
২৬. আরিফ নজরুল, কবি ও প্রাবন্ধিক
২৭. ড. মোহাম্মদ মাহমুদ হাসান, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, আইন ও লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ, কার্লটন ইউনিভার্সিটি, কানাডা
২৮. মনি হায়দার, কথাসাহিত্যিক
২৯. সরদার ফারুক, কবি
৩০. ফজলুল কবিরী, কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্য-সমালোচক
৩১. আবদুল্লাহ আল ইমরান, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
৩২. শফিক হাসান, কথাসাহিত্যিক ও ছোটকাগজ সম্পাদক
৩৩. আলমগীর মাসুদ, কবি ও সম্পাদক
৩৪. ড. মাসুদ পথিক, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
৩৫. আরিফুর রহমান, কথাসাহিত্যিক
৩৬. মেহেদী হাসান শোয়েব, লেখক, প্রকাশক ও সাংবাদিক
৩৭. আবদুল্লাহ আল মামুন, পিএইচডি গবেষক, কানাডা
৩৮. শামস সাইদ, কথাসাহিত্যিক
৩৯. বিনয় কর্মকার, কবি
৪০. সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
৪১. মিলন সব্যসাচী, কবি
৪২. এ কে এম মাহতাব ঊদ্দীন, মানবাধিকার কর্মী
৪৩. গিরীশ গৈরিক, কবি ও সাংবাদিক
৪৪. সমর চক্রবর্তী, কবি ও সাংবাদিক
৪৫. পিকলু চৌধুরী, নির্মাতা
৪৬. গোলাম মুজতবা মর্তুজা, সাংবাদিক
৪৭. নিশাত বিজয়, সাংবাদিক
৪৮. জহিরুল হক বাপি, লেখক
৪৯. নাদিম ইকবাল, চিত্রপরিচালক
৫০. অনিরুদ্ধ দিলওয়ার, কবি ও ছোটকাগজ সম্পাদক
৫১. রাফায়েত চৌধুরী, সমাজচিন্তক ও সংগঠক
৫২. রাশিদা স্বরলিপি, কথাসাহিত্যিক ও
সাংবাদিক