মালয়েশিয়ায় আটক ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট)-এর মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ দেশে বৈধ ও নির্বাচিত সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল—এমনই বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল।
২৭শে জুন, শুক্রবার কুয়ালালামপুরে এক বিবৃতিতে তিনি জানান, মালয়েশিয়ার পুলিশ বিভাগ দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে গত ২৪শে এপ্রিল থেকে তিন ধাপে অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে সেলাঙ্গর ও জহর রাজ্যে ৩৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। খবর The Edge Malaysia, Malay Mail, Free Malaysia Today-এর।
মন্ত্রী বলেন, “স্পেশাল ব্রাঞ্চের গোয়েন্দা তথ্য ও সমন্বিত অভিযানে জানা যায়, এই গ্রুপটি ইসলামিক স্টেট-এর চরমপন্থী বিশ্বাস নিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করে এবং তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘রিক্রুটমেন্ট সেল’ গড়ে তোলে। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং নিজ দেশে (বাংলাদেশে) গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে (আওয়ামী লীগ) উৎখাতের প্রস্তুতি গ্রহণ।”
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (Penal Code’s Chapter VIA) আওতায় চার্জ গঠন করা হয়েছে এবং তাদের শাহ আলম ও জহর বারুর আদালতে তোলা হয়েছে। আরও ১৫ জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ জারি হয়েছে এবং বাকি ১৬ জন এখনো পুলিশের তদন্তাধীন।
মন্ত্রী বলেন, “মালয়েশিয়া কখনও কোনো বিদেশি চরমপন্থী গোষ্ঠীর জন্য আশ্রয়স্থল হবে না। আমাদের দেশে কেউ যদি উগ্রপন্থী কার্যক্রম বা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই অভিযান আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর দক্ষতা এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারেরই প্রমাণ।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মালয়েশিয়া সরকার এখন দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য দেশি-বিদেশি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর কথা বলেছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি, তবে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কার্যক্রম নিয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক আমিনুল হক জঙ্গিদের আটকের ঘটনার সাথে প্রাসঙ্গিক হিসেবে উল্লেখ করেন, ৫ই আগস্টের পর কারাগার থেকে পলাতক এবং জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত অনেক জঙ্গি বিভিন্ন দেশে গোপনে চলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এতে সরকারের একটি বিশেষ মহলের পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় চরমপন্থী সংশ্লিষ্টতায় ৩৬ বাংলাদেশি নাগরিকের গ্রেপ্তারের ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্যান্য দেশগুলোতেও বাংলাদেশিদের প্রতি সন্দেহ বাড়বে। বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশে কাজ কিংবা শিক্ষা-ভ্রমণের সুযোগ ইতোমধ্যে সীমিত হয়ে পড়েছে। ভিসাপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে গেছে। মালয়েশিয়ার ঘটনায় সেটি একেবারে বন্ধ হওয়ার দিকে এগোতে পারে।
“ইউনূস সরকারের আমলে বাংলাদেশিদের জন্য গোটা পৃথিবীটাই যেন সংকুচিত হয়ে পড়েছে”—এমন প্রতিক্রিয়াও জানান এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।