বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কন্যা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডাঃ সায়মা ওয়াজেদ পুতুল থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২৪তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক মানসিক স্বাস্থ্য সম্মেলনে ২০২৫ সালের জন্য তাঁর অপরিসীম অবদান ও রূপান্তরমূলক নেতৃত্বের স্বীকৃতি এবং বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ গঠনে গভীর প্রভাবের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে পুরস্কারটি প্রদান করা হয়। ব্যাংককে আয়োজিত সম্মেলনটিতে সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল ‘Jittavejsart Songkrao Foundation’ ও ‘Somdet Chaopraya Institute of psychiatry at ICONSIAM, Bangkok’।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ক বহুল প্রশংসিত ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নেত্রী, যিনি এই খাতে নিষ্ঠা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নীতি-প্রণয়ন ও বৈশ্বিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাঁর দূরদর্শী কাজ মানবাধিকার, সামগ্রিক পরিচর্যা এবং সংস্কৃতিভিত্তিক প্রেক্ষাপটের গভীর উপলব্ধির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর তাঁর গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতাসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। তিনি ২০১৩ সালে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালে পুতুলকে ‘Who Excellence Award’ এ ভূষিত করে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অটিজম স্পিকস’ -এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠিত হয় ‘South Asian Autism Network (SAAN)’। তাঁর চেষ্টাতেই বাংলাদেশে ‘নিউরোডেভলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩’ পাস করা হয়। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সৃষ্টিশীল নারী নেতৃত্বের ১০০ জনের তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও কাজ করছেন সায়মা ওয়াজেদ। ২০১৬ সালে তিনি প্রতিবন্ধীদের ডিজিটাল ক্ষমতায়নের জন্য ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডেও সভাপতি পদে নির্বাচিত হন।
তার ঐকান্তিক চেষ্টায় বাংলাদেশে অটিজম সংক্রান্ত কার্যক্রম এগিয়েছে অভাবনীয়ভাবে। ১৪টি মন্ত্রণালয় নিয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় টাস্কফোর্স। ৮টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি। অটিজম নিয়ে আরও ব্যাপক আকারে কাজ করতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পরিকল্পনায় দেশে অটিজম সংক্রান্ত বেশকিছু চিকিৎসা সহায়তাকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। যেমন- ইনস্টিটিউট ফর পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (IPNA), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়; চাইল্ড গাইডেন্স ক্লিনিক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট; ঢাকা শিশু হাসপাতাল; শিশু বিকাশ কেন্দ্র, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল; প্রয়াস বিশেষায়িত স্কুল, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট; মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বা মনোরোগবিদ্যা বিভাগ; নিকটস্থ জেলা সদর হাসপাতাল বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও বিশেষায়িত স্কুল; প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের এই অর্জন বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে। দেশের ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।