দেশব্যাপী গণমাধ্যমে হামলা, সাংবাদিকদের হয়রানি-হুমকি-নির্যাতন, কারাবন্দি সাংবাদিকদের জামিন না দেওয়ার প্রতিবাদে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবিতে এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত ৫১ জন সাংবাদিক। ৮ই জুলাই, মঙ্গলবার এই বিবৃতিটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বিবৃতিতে সাংবাদিকরা বলেন, “দেশ এখন মব সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি, গণমাধ্যমও এই জিম্মি দশা থেকে মুক্ত নয়।”
তারা অভিযোগ করেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, চাকরিচ্যুতি, গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা, এমনকি সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ গভীর নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের কয়েকটি প্রধান পত্রিকার কার্যালয়ের সামনে প্রকাশ্যে গরু জবাই করে জিয়াফতের আয়োজন করা হয়েছে, যা ছিল মব সন্ত্রাসীদের স্পষ্ট হুমকি। বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি হাউস দখল করা হয়েছে, তালিকা ধরে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। এসব ঘটনায় অভিযুক্তরা চিহ্নিত হলেও তাঁদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। এতে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, “ক্ষমতাধর কোনো মহল এসবের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।”
সাংবাদিকরা জানান, দেশি-বিদেশি রিপোর্ট এবং অধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এই সময়ে অন্তত ৪১২ জন সাংবাদিক বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলায় আসামি হয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩৯ জন।
তথ্য মন্ত্রণালয় ১৬৮ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল করেছে, দেশের বিভিন্ন প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন ১০১ জন।
বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩০০ সাংবাদিকের ওপর, জব্দ করা হয়েছে শতাধিক সাংবাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। এ সময়ের মধ্যে সহস্রাধিক সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) অফিস দীর্ঘ ১১ মাস ধরে তালাবদ্ধ। মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ দখলে নেওয়া হয়েছে।”
বিবৃতিতে সাংবাদিকরা বলেন, “প্রতিটি নাগরিকের মতো সাংবাদিকদেরও আইনি প্রতিকার ও জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু সাংবাদিকদের বিনাবিচারে মাসের পর মাস কারাগারে রাখা হচ্ছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।”
তারা আশা করেছিলেন অন্তর্র্বতী সরকার সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, কিন্তু এক বছর পার হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বিবৃতিতে দাবি জানানো হয়:
সব সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করতে হবে
সাংবাদিকদের ওপর হয়রানি বন্ধ করতে হবে
কারাবন্দি সাংবাদিকদের দ্রুত জামিন দিতে হবে
যারা প্রকাশ্যে গণমাধ্যমকে হুমকি দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
সাংবাদিকদের রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে
এই বিবৃতিতে সই করেছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ও সংস্থার প্রথিতযশা সাংবাদিকরা, তাদের মধ্যে রয়েছেন:
আবু জাফর সূর্য (সাবেক সভাপতি, ডিইউজে)
সৈয়দ শুকুর আলী শুভ (সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ডিআরইউ)
নজরুল কবীর (সিনিয়র সাংবাদিক)
সৈয়দ বোরহান কবির (প্রধান সম্পাদক, বাংলা ইনসাইডার)
আকতার হোসেন (সাধারণ সম্পাদক, ডিইউজে)
জাকির হোসেন ইমন (সাবেক সভাপতি, ডিএসইসি)
মোহাম্মদ ফারুক হোসেন তানভীর (সভাপতি, টিসিএ)
শেখ জামাল (সম্পাদক, দৈনিক মুখপাত্র)
মহসিন কাজী (যুগ্ম মহাসচিব, বিএফইউজে)
মাহমুদুল আলম নয়ন (সহসভাপতি, বিএফইউজে)
জামাল উদ্দিন (সিনিয়র সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক)
সাঈদুজ্জামান সম্রাট (সভাপতি, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন)
দীপক চৌধুরী বাপ্পি ও ফরহাদুল ইসলাম পারভেজ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়ন)
রিয়াজ হায়দার চৌধুরী (সভাপতি, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন)।