দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে ‘ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮’ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) “The Code of Criminal Procedure (Amendment) Ordinance, 2025” নামে অধ্যাদেশটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অধ্যাদেশটি প্রকাশের দিন থেকেই কার্যকর বলে গণ্য হবে।
সংসদ অধিবেশন না থাকায় সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ জারি করেন। এতে নতুনভাবে যুক্ত করা হয়েছে ধারা ১৭৩এ (173A), যার মাধ্যমে তদন্ত চলাকালে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে অব্যাহতি দেওয়ার আইনি সুযোগ তৈরি হয়েছে।
নতুন ধারা ১৭৩A এর মূল বৈশিষ্ট্য:
১. অন্তর্বর্তীকালীন তদন্ত প্রতিবেদন (Interim Investigation Report):
মামলার তদন্ত চলাকালে পুলিশ কমিশনার, জেলা পুলিশ সুপার বা সমমর্যাদার কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিতে পারবেন। এ প্রতিবেদন মামলার অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরবে।
২. অব্যাহতির সুযোগ:
প্রাপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন অনুযায়ী যদি দেখা যায়, কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ নেই, তবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনে সেই প্রতিবেদন আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্রাইব্যুনাল) দাখিল করা যাবে। আদালত সন্তুষ্ট হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারবেন। এতে নিরপরাধ ব্যক্তিদের অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানি ও দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার ঝুঁকি কমবে।
৩. পুনরায় অভিযুক্তের অন্তর্ভুক্তি:
অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন অনুযায়ী কেউ অব্যাহতি পেলেও সেটি চূড়ান্ত নয়। তদন্ত শেষে যদি তার বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে (ধারা ১৭৩ অনুসারে) তার নাম আবার যুক্ত করার সুযোগ থাকবে।
বিচার বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই বিধানটি দেশের বিচার প্রক্রিয়ায় একটি যুগান্তকারী ও মানবিক সংযোজন। এটি একদিকে যেমন দীর্ঘমেয়াদী তদন্তাধীন মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি থেকে রক্ষা করবে, অন্যদিকে মামলার বোঝা ও বিচার ব্যবস্থার চাপও অনেকাংশে হ্রাস করবে।আরটিভি/কেএইচ