।।জয় আদিত্য।।
একটা জাতি যখন যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে, তখন তার সবচেয়ে বড় শত্রু থাকে— ভিতরের বিশ্বাসঘাতকরা। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে, কিন্তু তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, দিকনির্দেশনা দিয়েছে, এবং আমাদেরই ভাই-বোনদের রক্তে হাত রাঙিয়েছে যে চক্র, তাদের নাম—জামায়াতে ইসলামী।
এই দলটি শুধু ধর্মের নামে প্রতারণাই করেনি, বরং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। তারা আলবদর-আলশামস গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে নিষ্ঠুর অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো পরিকল্পিত গণহত্যায় তাদের হাত রয়েছে—এটা ইতিহাস, এটা রক্তে লেখা সত্য। সেই রক্তাক্ত জামাত আজ নতুন নাম, নতুন মুখোশ আর নতুন দাড়ি-পাঞ্জাবি পরে রাজনীতির মাঠে ফিরে এসেছে।
আজ তারা গলার স্বরে কোরআনের আয়াত পড়ে, মুখে “ইনশাআল্লাহ” বলে, কিন্তু অন্তরে ধারণ করে সেই পুরোনো পাকিস্তানি ভাবাদর্শ। তারা এখন নিজেদের পরিচয় দিতে চায় “ভদ্র, পবিত্র, হালাল রাজনৈতিক শক্তি” হিসেবে। কিন্তু জনগণ জানে—এরা মূলত ‘হালাল শুয়োর’। বাইরের আবরণে ধর্মীয় পবিত্রতা, ভেতরে ইতিহাস বিকৃতির বিষ।
এখন প্রশ্ন হলো—এই হালাল শুয়োরগুলো ফিরে এলো কীভাবে?
একটি দুর্বল রাষ্ট্র, লুটপাট আর স্বার্থান্বেষী শাসকের ছত্রছায়ায় তারা আবার মাথা তুলেছে। ইউনূস সরকারের নেপথ্য শক্তি হিসেবে জামায়াত আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তাদের হাতে রাষ্ট্রের চাবিকাঠি তুলে দিচ্ছে। প্রশাসনে, আদালতে, মিডিয়ায় এমনকি গোয়েন্দা সংস্থায় জামাতি দখলদারি স্পষ্ট। ইউনূস সরকার এই পশ্চাৎমুখী শক্তিকে আবার ‘মূলধারায়’ ফিরিয়ে এনেছে—ঠিক যেন একাত্তরের ঋণ শোধ করছে।
জামায়াতের এই নতুন উত্থান আসলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নৈতিক পরাজয়ের প্রতীক। এই দল এখন রাজপথে নামে, সামাজিক আন্দোলনের মুখোশ পরে। তারা এখন সুশীল মুখে বিভ্রান্তিকর বয়ান দেয়, তরুণ প্রজন্মের মাঝে ‘ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা’র মোহ ছড়ায়। অথচ তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো—বাংলাদেশ রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দেওয়া। তারা সংবিধান মানে না, স্বাধীনতার চেতনাকে অস্বীকার করে, এবং গণতন্ত্রকে শুধুই একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
আজকের বাংলাদেশে জামায়াত কোনো নিষিদ্ধ দল নয়—বরং ক্ষমতাসীনদের ছায়াতলে বেড়ে ওঠা একটি “পলিটিক্যাল ইনভেস্টমেন্ট”। তাদের জন্য বাজেট আছে, মন্ত্রণালয়ের দরজা খোলা, এবং রাষ্ট্রের কণ্ঠস্বর নীরব।
এই নীরবতা, এই আপস, এই ‘হালালীকরণ’ আমাদের স্বাধীনতাকে উপহাস করে। আমরা দেখছি—একাত্তরের খুনিরা এখন পবিত্রতার সনদ নিয়ে ফিরে এসেছে। তারা আমাদের মুখের উপর থুথু দিয়ে বলছে, “আমরাই আসল মুসলমান, আসল দেশপ্রেমিক”।
না, এদেরকে চেনা দরকার। এদের মুখোশ টেনে নামাতে হবে।
এই হালাল শুয়োরগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রযন্ত্রে বসে থাকবে, ততদিন আমাদের স্বাধীনতা নিরাপদ নয়। আমাদের ইতিহাস নিরাপদ নয়। আমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ নয়।
এই দেশ যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে রক্তে ভাসিয়েছে, তাদের পবিত্রতার অভিনয় ইতিহাস মেনে নেবে না। হালাল সনদ দিয়ে যারা শুয়োরকে মানুষ বানাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু রাজনৈতিক নয়, এটা নৈতিক দায়িত্ব।
লেখক পরিচিতি: গণমাধ্যমকর্মী