যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে শুল্ক বিষয়ক দ্বিতীয় দফার আলোচনা গত ৯ থেকে ১১ই জুলাই ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যমত্য হলেও, চূড়ান্ত সমঝোতা অধরাই রয়ে গেছে। আগামী ১লা আগস্ট থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫% শুল্ক কার্যকর হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা দেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের জন্য বড় হুমকি। গত ফেব্রুয়ারি থেকে আলোচনা শুরু হলেও বাংলাদেশ কেন সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ওরফে রজার রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নেয়। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি, গম, তুলা এবং বোয়িং বিমান আমদানি বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া, অ-শুল্ক বাধা যেমন- পণ্য পরীক্ষার প্রক্রিয়া ও কাস্টমস পদ্ধতি সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কঠিন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে “মেড ইন বাংলাদেশ” পণ্যের জন্য ৪০% স্থানীয় মূল্য সংযোজনের বাধ্যবাধকতা এবং “মিরর কন্ডিশন”, যা বাংলাদেশকে অন্য দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সমান শুল্ক আরোপ করতে বাধ্য করে। বাংলাদেশ এই শর্তগুলোকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম ও দেশের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী বলে মনে করছে।
কেন বাংলাদেশ আলোচনায় ব্যর্থ হচ্ছে?
গত ফেব্রুয়ারি থেকে আলোচনা শুরু হলেও বাংলাদেশ কয়েকটি কারণে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছে না। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের শর্তগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ৪০% স্থানীয় মূল্য সংযোজনের শর্ত পোশাক শিল্পের জন্য অত্যন্ত কঠিন, কারণ বাংলাদেশ অনেক কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল। দ্বিতীয়ত, মিরর কন্ডিশন বাংলাদেশের অন্য বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল করতে পারে, যা দেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য কৌশলের জন্য ক্ষতিকর। তৃতীয়ত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির আওতায় কঠোর শুল্ক নীতি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আলোচনার সুযোগ সীমিত করেছে।
এছাড়া, ভিয়েতনামের মতো দেশ প্রথম দফায় চুক্তিতে পৌঁছালেও, বাংলাদেশের তুলনায় তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো ও বাণিজ্য কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের শর্তের সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ২রা এপ্রিল বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন, যা আলোচনার জন্য ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে এই শুল্ক ৩৫%-এ নামিয়ে আনা হয়, কিন্তু এটি এখনও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি। এই শিল্প দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০%-এর বেশি অবদান রাখে এবং লাখো মানুষ, বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস। শুল্ক কার্যকর হলে কারখানা বন্ধ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে।
আলোচনায় ভিয়েতনামের মতো কোনো চূড়ান্ত চুক্তি না হলেও, উভয় পক্ষ মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। ভার্চুয়াল বা সশরীরে পরবর্তী বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ইতিবাচক ফলাফলের আশা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ এখন এই শুল্কের প্রভাব কমাতে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আলোচনার ফলাফল বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।