
।। মিহিরকান্তি চৌধুরী।।
সকালের নরম আলোয় চায়ের কাপ হাতে নিয়ে কেউ যদি মুখে তুলে নেন এক টুকরো ম্যারি বিস্কুট, তিনি হয়ত জানেন না—এই সাদামাটা বিস্কুটটির পেছনে আছে এক অনন্য রাজকীয় ইতিহাস। আজ যেটি আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সাধারণ এক অংশ, তার উৎপত্তি কিন্তু এক ঐশ্বর্যময়, চোখধাঁধানো প্রাসাদের প্রাঙ্গণে, এক রাজকন্যার বিয়ের আনন্দঘন মুহূর্তে।
১৮৭৪ সালের ২৩ জানুয়ারি—সমগ্র ইউরোপ সেদিন তাকিয়ে ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গের উইন্টার প্যালেসের দিকে। ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার পুত্র প্রিন্স আলফ্রেডের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছিলেন রাশিয়ার জার আলেকজান্ডার দ্বিতীয়-এর কন্যা, রাজকন্যা মারিয়া আলেক্সান্দ্রোভনা। ঐতিহাসিক এই রাজবিয়ের আয়োজনে ছিল অগণিত অলংকার, রাজকীয় সাজসজ্জা, সুর ও সংগীতের অপূর্ব মেলবন্ধন। একদিকে দুই সাম্রাজ্যের বন্ধন, অন্যদিকে এক তরুণী রাজকন্যার নতুন জীবনের সূচনা।
এই অনন্য ঘটনার স্মারক হয়ে রইল একটি বিস্কুট! হ্যাঁ, এই রাজবিয়ের সম্মানে লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী বেকারি Peek, Frean & Co.-এর দুই প্রতিষ্ঠাতা জেমস পিক ও জর্জ হেন্ডার ফ্রিয়ান তৈরি করলেন এক নতুন ধরণের বিস্কুট। নাম রাখা হলো ‘ম্যারি বিস্কুট’—প্রিয় রাজকন্যার সম্মানে।
অবাক করা ব্যাপার হলো, যেই বিস্কুট রাজবাড়ির মর্যাদা নিয়ে জন্মেছিল, তা অল্পদিনেই পরিণত হলো সাধারণ মানুষের ভালবাসার প্রতীক। রাজসিক উৎসর্গ হলেও ম্যারি বিস্কুটের গঠন ছিল একেবারে সহজ ও সরল—পাতলা, খাস্তা ও হালকা মিষ্টি স্বাদের। সহজপ্রাপ্য ও হজমযোগ্য হওয়ায় এটি ব্রিটিশ মধ্যবিত্ত সমাজে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ধীরে ধীরে এই বিস্কুট ছড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ ও নানা দেশে। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে শুরু করে আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান ও মধ্যপ্রাচ্য—সবখানেই ম্যারি বিস্কুট হয়ে ওঠে শিশুদের টিফিন, রোগীর সঙ্গী, আবার সন্ধ্যার চায়ের টেবিলের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আজ, দেড়শো বছরেরও বেশি পেরিয়ে এসে, ম্যারি বিস্কুট আমাদের কাছে আর কোনো রাজকন্যার কথা মনে করিয়ে দেয় না হয়তো। কিন্তু তার জন্মলগ্নের সেই কাহিনি এক অজানা স্বাদ যোগ করে আমাদের নিত্যদিনের অভ্যস্ততার ভেতর। সে কাহিনি বলে—কীভাবে এক রাজকন্যার নামে তৈরি হওয়া একটি সাদাসিধে বিস্কুট হয়ে উঠল গোটা বিশ্বের চায়ের অপরিহার্য সঙ্গী।
রাজকীয় আভিজাত্য থেকে শুরু হয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যাওয়া—এই বিস্কুট যেন এক মধুর সময়ের সাক্ষ্য।
উল্লেখ্য, রানি ভিক্টোরয়া (১৮৩৭-১৯০১) এর পর তাঁর বড়ো ছেলে সপ্তম এডওয়ার্ড রাজা হন (১৯০১-১৯১০)। এরপর সপ্তম এডওয়ার্ড এর ছেলে পঞ্চম জর্জ (১৯১০-১৯৩৬)। তারপর পঞ্চম জর্জ এর ছেলে অষ্টম এডওয়ার্ড কয়েক মাসের জন্য, বলা যায় এক বছর জন্য (জানুয়ারি ১৯৩৬-ডিসেম্বর ১৯৩৬) রাজত্ব করেন। তারপর রাজপরিবার বহির্ভূত লেডি সিম্পসন নামক মহিলাকে বিয়ে করার জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেন)। তখন অষ্টম এডওয়ার্ড এর ভাই ষষ্ঠ জর্জ রাজা হন (১৯৩৬-১৯৫২)। তারপর রানি দ্বিতীয় এরিজাবেথ (১৯৫২-২০২২) এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বড়ো ছেলে রানির আমলের যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলস প্রিন্স চার্লস রাজা তৃতীয় চার্লস নাম ধারণ করে রাজা হন। রানি ভিক্টোরিয়ার পুত্র প্রিন্স আলফ্রেড তাঁর মায়ের আগেই প্রয়াত হন (১৮৪৪-১৯০০)।
লন্ডনের আইনি প্রতিষ্ঠান স্টেফেনসন হারউড এলএলপি মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও দুদকের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠানোর পর এর ব্রিটিশ লেবার পার্টির প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কথিত ফ্ল্যাট জালিয়াতির মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে চাপে পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ অবস্থায় হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি হাইকোর্টে শাহ খসরুজ্জামান নামের এক আসামির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তিন মাসের জন্য মামলাটি স্থগিত করে রুল জারি করেছেন। বিষয়টি জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী একটি চিঠি দেয় দুদকে। তদন্ত প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় এমন স্থগিতাদেশে হতবাক সংস্থাটি।
দুদকের আইনজীবী এম এ আজিজ খান বলেন, তদন্ত চলাকালে এমন স্থগিতাদেশ অপ্রত্যাশিত। এতে পুরো তদন্ত কাজই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি জানান, উচ্চ আদালতের লিখিত আদেশে পুরো মামলার নয়, শুধু খসরুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিতের নির্দেশ থাকতে পারে। তা সত্ত্বেও সংস্থাটি আপিল করবে যাতে তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা যায়।
এর আগে, টিউলিপের পক্ষ থেকে লন্ডনের আইনি প্রতিষ্ঠান স্টেফেনসন হারউড এলএলপি মাধ্যমে ড. ইউনূস ও দুদকের বিরুদ্ধে পাঠানো একটি উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। যাতে অভিযোগ করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও দুদক রাজনৈতিকভাবে তাকে হয়রানি এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করতে পরিকল্পিত প্রচারণা চালাচ্ছে। এখনো টিউলিপের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা ও তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে হয়রানি ও চরিত্র হনন করেই যাচ্ছে।
উকিল নোটিশে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ড. ইউনূস ও দুদক একজোট হয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছেন। তাদের মূল লক্ষ্য শুধু একটি মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে তাকে হেয় করা নয়, বরং যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্থক্ষেপ করা এবং টিউলিপের নির্বাচনী এলাকা ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো।
টিউলিপের ভাষায়, এটা পরিষ্কার যে, এ এক পরিকল্পিত হয়রানি। একজন প্রবাসী বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি নারী রাজনীতিক হিসেবে আমাকে আক্রমণের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাই কাজ করছে।
তিনি আরো জানান, ১৮ই মার্চ ও ১৫ই এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চিঠি পাঠানো হয়। ৪ঠা জুন চিঠি পাঠানো হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো পক্ষই জবাব দেয়নি, যা পরিস্থিতিকে আরও গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে।
উকিল নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক যখন ইউনূসের লন্ডন সফরের খবর জানতে পারেন, তখন তিনি ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেন। উদ্দেশ্য ছিল নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে সরাসরি আলাপ করা। কিন্তু ইউনূস সেই প্রস্তাব উপেক্ষা করেন, যা আইনি শালীনতা এবং নৈতিক দায়িত্ববোধের চরম অবজ্ঞা বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্টেফেনসন হারউড মনে করে, ইউনূস ও দুদক একটি মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে টিউলিপকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন। তারা বলেন, “যদি এসব কর্মকাণ্ড ৩০শে জুনের মধ্যে থামানো না হয় এবং চিঠির যথাযথ জবাব না দেওয়া হয়, তবে টিউলিপ সিদ্দিক এই ঘটনাকে ‘সমাপ্ত’ হিসেবে ধরে নিয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, এখন সময় এসেছে এই ষড়যন্ত্র থেকে সরে আসার। একজন বিদেশি সংসদ সদস্য ও ব্রিটিশ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে উদ্দেশ্য করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এমন অভিযোগ, হয়রানি এবং চরিত্র হনন কার্যক্রম গ্রহণযোগ্য নয়।
টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী দল স্টিফেনসন হারউড ল ফার্মের বক্তব্য, গত ১৮ই মার্চ থেকে তারা দুদকের কাছে লিখিতভাবে প্রমাণ চেয়ে আসছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোনো প্রমাণ বা দলিলপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। তারা এই অভিযোগগুলোকে “ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, গুলশানে ইস্টার্ন হাউজিংকে ‘অনৈতিকভাবে’ প্লট নির্মাণের সুযোগ করে দিয়ে বিনিময়ে ওই ভবনেই একটি ফ্ল্যাট নেন ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।
এ বিষয়ে চলতি বছরের ১৫ই এপ্রিল টিউলিপসহ রাজউকের সাবেক দুই কর্মকর্তা শাহ খসরুজ্জামান ও সরদার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুদকের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি মূলত শুরু হয় ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়, যার নেতৃত্বে ছিলেন ড. ইউনূস। সে সময় শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়, যা পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এমনকি রাষ্ট্রীয় অর্থে লন্ডনে গিয়ে ইউনূস বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করলেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ পেতে ব্যর্থ হন।
এ নিয়ে বিবিসিতে প্রশ্নোত্তর পর্বে তাকে চাপের মুখে পড়তে হয়। এমনকি টিউলিপ সিদ্দিক তার মামলার ব্যাপারে খোলাখুলি আলাপ করতে চাইলেও এড়িয়ে যান ইউনূস।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিতর্ক এড়াতে এবং ব্রিটিশ সরকারের স্বাধীন তদন্ত দলকে প্রভাবমুক্ত রাখতে টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেন গত বছর। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার টিউলিপের সেই পদত্যাগ গ্রহণ করেন এবং জানান, ব্রিটিশ সরকারের স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস টিউলিপের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন বা আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রমাণ পাননি। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার টিউলিপের স্বচ্ছতা ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে টিউলিপের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন জানান।
পরিচিতি: অনুবাদক, লন্ডনের আইনি প্রতিষ্ঠান স্টেফেনসন হারউড এলএলপি মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও দুদকের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠানোর পর এর ব্রিটিশ লেবার পার্টির প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কথিত ফ্ল্যাট জালিয়াতির মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে চাপে পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ অবস্থায় হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি হাইকোর্টে শাহ খসরুজ্জামান নামের এক আসামির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তিন মাসের জন্য মামলাটি স্থগিত করে রুল জারি করেছেন। বিষয়টি জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী একটি চিঠি দেয় দুদকে। তদন্ত প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকা অবস্থায় এমন স্থগিতাদেশে হতবাক সংস্থাটি।
দুদকের আইনজীবী এম এ আজিজ খান বলেন, তদন্ত চলাকালে এমন স্থগিতাদেশ অপ্রত্যাশিত। এতে পুরো তদন্ত কাজই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি জানান, উচ্চ আদালতের লিখিত আদেশে পুরো মামলার নয়, শুধু খসরুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত স্থগিতের নির্দেশ থাকতে পারে। তা সত্ত্বেও সংস্থাটি আপিল করবে যাতে তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা যায়।
এর আগে, টিউলিপের পক্ষ থেকে লন্ডনের আইনি প্রতিষ্ঠান স্টেফেনসন হারউড এলএলপি মাধ্যমে ড. ইউনূস ও দুদকের বিরুদ্ধে পাঠানো একটি উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। যাতে অভিযোগ করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও দুদক রাজনৈতিকভাবে তাকে হয়রানি এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করতে পরিকল্পিত প্রচারণা চালাচ্ছে। এখনো টিউলিপের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টা ও তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে হয়রানি ও চরিত্র হনন করেই যাচ্ছে।
উকিল নোটিশে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, ড. ইউনূস ও দুদক একজোট হয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছেন। তাদের মূল লক্ষ্য শুধু একটি মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে তাকে হেয় করা নয়, বরং যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্থক্ষেপ করা এবং টিউলিপের নির্বাচনী এলাকা ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো।
টিউলিপের ভাষায়, এটা পরিষ্কার যে, এ এক পরিকল্পিত হয়রানি। একজন প্রবাসী বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি নারী রাজনীতিক হিসেবে আমাকে আক্রমণের পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাই কাজ করছে।
তিনি আরো জানান, ১৮ই মার্চ ও ১৫ই এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের চিঠি পাঠানো হয়। ৪ঠা জুন চিঠি পাঠানো হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো পক্ষই জবাব দেয়নি, যা পরিস্থিতিকে আরও গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে।
উকিল নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, টিউলিপ সিদ্দিক যখন ইউনূসের লন্ডন সফরের খবর জানতে পারেন, তখন তিনি ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেন। উদ্দেশ্য ছিল নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে সরাসরি আলাপ করা। কিন্তু ইউনূস সেই প্রস্তাব উপেক্ষা করেন, যা আইনি শালীনতা এবং নৈতিক দায়িত্ববোধের চরম অবজ্ঞা বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্টেফেনসন হারউড মনে করে, ইউনূস ও দুদক একটি মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে টিউলিপকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন। তারা বলেন, “যদি এসব কর্মকাণ্ড ৩০শে জুনের মধ্যে থামানো না হয় এবং চিঠির যথাযথ জবাব না দেওয়া হয়, তবে টিউলিপ সিদ্দিক এই ঘটনাকে ‘সমাপ্ত’ হিসেবে ধরে নিয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, এখন সময় এসেছে এই ষড়যন্ত্র থেকে সরে আসার। একজন বিদেশি সংসদ সদস্য ও ব্রিটিশ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে উদ্দেশ্য করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এমন অভিযোগ, হয়রানি এবং চরিত্র হনন কার্যক্রম গ্রহণযোগ্য নয়।
টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী দল স্টিফেনসন হারউড ল ফার্মের বক্তব্য, গত ১৮ই মার্চ থেকে তারা দুদকের কাছে লিখিতভাবে প্রমাণ চেয়ে আসছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোনো প্রমাণ বা দলিলপত্র উপস্থাপন করতে পারেনি। তারা এই অভিযোগগুলোকে “ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে আখ্যায়িত করেছেন।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ, গুলশানে ইস্টার্ন হাউজিংকে ‘অনৈতিকভাবে’ প্লট নির্মাণের সুযোগ করে দিয়ে বিনিময়ে ওই ভবনেই একটি ফ্ল্যাট নেন ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।
এ বিষয়ে চলতি বছরের ১৫ই এপ্রিল টিউলিপসহ রাজউকের সাবেক দুই কর্মকর্তা শাহ খসরুজ্জামান ও সরদার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুদকের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি মূলত শুরু হয় ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়, যার নেতৃত্বে ছিলেন ড. ইউনূস। সে সময় শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়, যা পরবর্তীতে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এমনকি রাষ্ট্রীয় অর্থে লন্ডনে গিয়ে ইউনূস বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করলেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ পেতে ব্যর্থ হন।
এ নিয়ে বিবিসিতে প্রশ্নোত্তর পর্বে তাকে চাপের মুখে পড়তে হয়। এমনকি টিউলিপ সিদ্দিক তার মামলার ব্যাপারে খোলাখুলি আলাপ করতে চাইলেও এড়িয়ে যান ইউনূস।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিতর্ক এড়াতে এবং ব্রিটিশ সরকারের স্বাধীন তদন্ত দলকে প্রভাবমুক্ত রাখতে টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেন গত বছর। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার টিউলিপের সেই পদত্যাগ গ্রহণ করেন এবং জানান, ব্রিটিশ সরকারের স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস টিউলিপের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন বা আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রমাণ পাননি। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার টিউলিপের স্বচ্ছতা ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে টিউলিপের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন জানান। ছবি ঋণ : কিচুমিচু ওয়েব
লেখক পরিচিতি: অনুবাদক, মননশীল লেখক ও নির্বাহী প্রধান, টেগোর সেন্টার সিলেট।