।। বিশেষ প্রতিবেদন।।
শনিবার গভীর রাতে ঢাকার শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরের স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় গড়ে ওঠা এই চত্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে সারা দেশে সমাদৃত হয়েছিল। কিন্তু ড. ইউনূসের প্রশাসনের অধীনে এই ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংসের ঘটনা জাতির স্মৃতি ও সংগ্রামের ইতিহাস মুছে ফেলার এক নির্মম প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ছিল একটি ঐতিহাসিক জনজাগরণ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে এই আন্দোলন জাতির মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছিল। প্রজন্ম চত্বর ছিল সেই আন্দোলনের এক জীবন্ত স্মৃতি, যেখানে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে ন্যায়বিচারের পক্ষে কণ্ঠস্বর তুলেছিল। এই চত্বর শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং একটি জাতির সংগ্রাম, আশা এবং ঐক্যের প্রতীক ছিল। কিন্তু রাতের আঁধারে বুলডোজারের আঘাতে সেই প্রতীক এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এর আগেও ড. ইউনূসের প্রশাসনের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত দুই হাজারের অধিক এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তিন শতাধিক ভাষ্কর্য-ম্যুরাল ধ্বংস করা হয়েছে।
এছাড়া, বিজয় স্মরণীর ৭টি ঐতিহাসিক “ওয়াল অব ফেইম”, যা ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক অধ্যায়গুলোর প্রতিনিধিত্ব করত, তাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ধারাবাহিক ধ্বংসযজ্ঞে জাতির গৌরবময় ইতিহাস ও সংগ্রামের স্মৃতিচিহ্নগুলো একে একে মুছে ফেলা হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে, এভাবেও কি ইতিহাস মুছে ফেলা সম্ভব?
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর শুধু একটি স্থাপনাই ছিল না, এটি ছিল একটি প্রজন্মের স্বপ্ন, সংগ্রাম এবং আদর্শের প্রতীক। এটি ধ্বংস করা মানে কেবল ইট-পাথর ভাঙা নয়, বরং একটি জাতির চেতনা ও ইতিহাসের ওপর আঘাত হানা। এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনাকে “ইতিহাসের প্রতি অবমাননা” এবং “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর স্বাধীনতাবিরোধীদের আঘাত” হিসেবে অভিহিত করছেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী – ঢাবির সাবেক ছাত্রনেতা বলেন, “শনিবার রাতে যখন বুলডোজার দিয়ে প্রজন্ম চত্বর ভাঙা হচ্ছিল, তখন মনে হচ্ছিল আমাদের সংগ্রামের স্মৃতিগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এটা কেবল একটি চত্বর নয়, আমাদের প্রজন্মের আত্মপরিচয়ের অংশ ছিল।”
ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ঘটনাকে উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন, যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। তারা সতর্ক করে বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ জাতির ঐক্য ও ইতিহাসের প্রতি ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে।
প্রজন্ম চত্বর ধ্বংসের এই ঘটনা কেবল শাহবাগের সীমানায় আবদ্ধ নয়, এটি একটি জাতির সংগ্রাম ও স্মৃতির ওপর আঘাত। প্রশ্ন থেকে যায়—ইতিহাসের এই ধ্বংসযজ্ঞ কি আমাদের গৌরবময় অতীতকে মুছে ফেলতে পারবে? নাকি জনগণের চেতনায় এই স্মৃতি চিরকাল অমলিন থাকবে?