গোপালগঞ্জে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি রক্ষার জন্য সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের ওপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুলিতে চারজন শহিদ ও শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের অবস্থান বিবেচনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে।
শহিদ হয়েছেন যারা:
১. দীপ্ত সাহা, পিতা: সুভ সাহা, ঠিকানা: পোস্ট অফিস মোড়, গোপালগঞ্জ শহর।
২. রমজান কাজী, বয়স: ২৪, ঠিকানা: থানাপাড়া, গোপালগঞ্জ।
৩. সোহেল মোল্লা, বয়স: ৩৫, ঠিকানা: থানাপাড়া, গোপালগঞ্জ।
৪. ইমন তালুকদার, বয়স: ২৮, ঠিকানা: ভেড়ারবাজার, গোপালগঞ্জ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে:
এই ঘটনাটি বিশ্বের একাধিক প্রভাবশালী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ:
ক) এপি নিউজ: গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ শুরু হয় এনসিপির একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে, যেখানে স্থানীয়রা তাদের ওপর চড়াও হয় এবং যানবাহনে আগুন দেয়। নিহতরা ছিলেন সাধারণ মানুষ, যারা বঙ্গবন্ধুর সমাধি রক্ষায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
খ) বিবিসি বাংলা: গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশের পর সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের সমর্থকদের সংঘর্ষে এই প্রাণহানি ঘটে। স্থানীয়রা জানান, সেনাবাহিনী সরাসরি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালিয়েছে।
গ) দ্য ইকোনমিক টাইমস: গোপালগঞ্জে বেসামরিক জনগণের ওপর সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে এবং একজনকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গেছে, যা দেশব্যাপী ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
ঘ) চ্যানেল নিউজ এশিয়া: গোপালগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে শেখ হাসিনার সমর্থকদের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকের শরীরে গুলির আঘাত রয়েছে। তারা আরও উল্লেখ করেছে, এই সংঘর্ষের পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
ঙ) টাইমস নাউ: এনসিপির সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, যা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এই ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্কের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১৬ই জুলাই, বুধবার সকালে এনসিপির কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাতির জনকের সমাধি রক্ষায় সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এনসিপির নেতাদের নিরাপত্তা দিতে আসা সেনাবাহিনী এই নিরীহ জনতার ওপর সরাসরি গুলি চালায়।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস জানান, “নিহতদের শরীরে গুলির আঘাত পাওয়া গেছে। শতাধিক আহতের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
আওয়ামী লীগের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউনূস সরকারের ‘রাষ্ট্রীয় দমননীতি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ এই হামলার শিকার হয়েছেন। তারা আরও অভিযোগ করেছেন, সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান থেকে তাঁর প্রতীকী উপস্থিতি মুছে ফেলার চক্রান্তে লিপ্ত।
এই ঘটনার পর গোপালগঞ্জে ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা দোষীদের শাস্তি এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই প্রতিবেদনগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গোপালগঞ্জের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগকে তুলে ধরেছে। সেনাবাহিনী বা এনসিপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।