বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংসের ঘটনার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প, ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার ভলকার তুর্কসহ আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের কাছে একটি জরুরি আবেদনপত্র পাঠিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (BHRW)।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিতর্কিত রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সিটিজেন্স পার্টি (NCP) — যা ‘কিংস পার্টি’ নামে পরিচিত — সম্প্রতি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। দলটি ২০০৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গঠিত হয়ছে। তবে চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, বর্তমান সংঘাতপূর্ণ কর্মকাণ্ডে ড. ইউনুসের প্রশাসনিক মদদ রয়েছে এবং এ বিষয়ে তার ভূমিকাও তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এই দলের সদস্যরা হিন্দু মন্দির, অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, জাতীয় বীরদের ভাষ্কর্য, সরকারি-বেসরকারি ভবন, এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ও স্বাধীনতার স্মৃতি জড়িত ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ধ্বংস করেছে। বিগত ১৬ই জুলাই এই দলের সদস্যরা সোশ্যালি মিডিয়ায় হুমকি দিয়ে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল ধ্বংস করার ইচ্ছা ব্যাক্ত করে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে “লং মার্চ” করে। তাদের সহায়তা করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, যারা “পর্যবেক্ষকের” ভূমিকায় থাকলেও এই ধ্বংসযজ্ঞ থামানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং ১৬ জুলাই ২০২৫ সালে গোপালগঞ্জে প্রতিবাদরত সাধারণ মানুষদের ওপর গুলি চালিয়ে অন্তত ২১ জন নিরীহ নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এই ঘটনাকে “মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন” আখ্যা দিয়ে চিঠিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষভাবে চিঠিতে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে চাওয়া হয়েছে:
গোপালগঞ্জে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর অনুমতি কে দিয়েছে?
কোন নির্দেশে সেনা সদস্যরা গুলি চালিয়েছে?
ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার বাড়ি ধ্বংসের সময় সেনাবাহিনী কেন নিরব ছিল?
কেন NCP-র কোনো সদস্য আহত বা গ্রেপ্তার হয়নি, অথচ ২১ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হলো?
গোপালগঞ্জের নাগরিকেরা কি বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই সংবিধানিক সুরক্ষা পায়?
চিঠিটি যাদের কাছে পাঠানো হয়েছে:
আন্তোনিও গুতেরেস – মহাসচিব, জাতিসংঘ
ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প – সাবেক প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্র
মার্কো রুবিও – মার্কিন সিনেটর ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জন থুন – মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা
চার্লস শুমার – মার্কিন সিনেটের সংখ্যালঘু দলের নেতা
মাইক জনসন – মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার
হাকিম জেফরিস – সংখ্যালঘু দলের নেতা, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ
তুলসি গ্যাবার্ড – মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ডিএনআই-এর পরিচালক
কাশ প্যাটেল – এফবিআই পরিচালক
পল কাপুর – দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভলকার তুর্ক – হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন (OHCHR)
গ্লোরিয়া স্টার কিন্স – সম্পাদক, ডিপ্লোম্যাটিক রিভিউ
চিঠির প্রেরক ও স্বাক্ষরকারী:
এই চিঠিটি প্রেরণ করেছেন ড. দিলীপ নাথ, নিউইয়র্কের ২৫ নম্বর অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্টের ডেমোক্রেটিক লিডার। তার সঙ্গে চিঠিতে আরও স্বাক্ষর করেছেন:
ড. নূরান নবি রানা হাসান মাহমুদ ড. প্রদীপ আর কর ড. মাসুদুল হাসান শরাফ সরকার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ এ. সিদ্দিক শাকাওয়াত আলী আরিফা রহমান রুমা ড. নিরু কামরুন নাহার।
চিঠিতে জাতিসংঘের কাছে একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়েছে, যা গোপালগঞ্জের হত্যাকাণ্ড ও জাতীয় ঐতিহ্য ধ্বংসের ঘটনাগুলি তদন্ত করবে এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনবে।
চিঠির শেষে বলা হয়েছে, এই নৃশংসতা শুধু একটি অঞ্চলের জন্য নয়, বরং গোটা জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের ওপর আঘাত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা এ ধরণের অপরাধকে উৎসাহিত করবে। তাই এখনই জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে জাতীয় মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।