গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে বলপ্রয়োগ, গুলি ও পাঁচ নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। সংস্থাটি বলেছে, প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা নাগরিক অধিকার ও সংবিধানের সরাসরি লঙ্ঘন।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) এক বিবৃতিতে এইচআরএফবি জানায়, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশের পর সহিংসতায় নিহত হন দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), সোহেল মোল্লা (৪১), ইমন (২৪) এবং রমজান মুন্সী (২৮)। আহত অনেকেই এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, যাদের অনেকে সংকটাপন্ন।
সংস্থাটি বলছে, “জনসমক্ষে গুলি চালানোর সিদ্ধান্ত শুধু অমানবিক নয়, এটি সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সরাসরি লঙ্ঘন। কোনো পরিস্থিতিতেই এমন অতিমাত্রার বলপ্রয়োগ গ্রহণযোগ্য নয়।”
ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বিবৃতিতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জনতার দিকে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। তবে পুলিশের আইজিপি দাবি করেছেন, “গোপালগঞ্জে পুলিশ কোনো মরণাস্ত্র ব্যবহার করেনি।”
অপরদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বল প্রয়োগে তারা বাধ্য হয়েছে।” তবে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।
এইচআরএফবি দাবি করেছে, সংঘর্ষ-পরবর্তী সময়ে আটক ব্যক্তিদের আদালতে উপস্থাপন এবং তাদের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। তারা বলেছে, “নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। একইসাথে দীর্ঘস্থায়ী কারফিউ বা গণপরিবহন-চলাচল নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তও পুনর্বিবেচনা করতে হবে।”
বিবৃতিতে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে বলা হয়, “নিহতদের মধ্যে একজনের পরিবার গণমাধ্যমে জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত চেয়েও কোনো সহায়তা পায়নি, ফলে লাশ দাফন করতে হয়েছে ময়নাতদন্ত ছাড়া। এটা শুধুই কর্তব্যে গাফিলতি নয়, বরং আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”
এইচআরএফবি মনে করে, এসব মৃত্যুর দায় নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বিবৃতির শেষে সংস্থাটি বলেছে, “এই ধরনের হামলা, বলপ্রয়োগ ও প্রাণহানি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং নাগরিক নিরাপত্তার ওপর ভয়াবহ আঘাত। ভবিষ্যতে যাতে এমন না ঘটে, সেজন্য এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সংগঠনের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন: ড. হামিদা হোসেন, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাজা দেবাশীষ রায়, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, শাহীন আনাম, জাকির হোসেন, সারা হোসেন, রঞ্জন কর্মকার, সালেহ আহমেদ, সঞ্জীব দ্রং, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, শামসুল হুদা, খুশী কবির, সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, শিপন কুমার রবিদাস, সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, দেওয়ান জামান, পল্লব চাকমা, রোকেয়া রফিক বেবী, গীতা দাস, আবদুস সাত্তার দুলাল, আশরাফুন্নাহার মিষ্টি—সহ হিউম্যান রাইটস ফোরামের ২৩ জন সদস্য।