স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়।এরপর দুইঘন্টা কোচিং এর জন্য কিছু ছাত্রছাত্রী স্কুলে ছিলো এবং যাদের অভিভাবক তখনও নিতে আসেনি তারা অপেক্ষা করছিলো।
দুপুর ১টা ১০ কি ১৫ মিনিটে একটা জেট বিমান ক্র্যাশ হয়ে দিয়াবাড়ি মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের হায়দার আলী বিল্ডিং এ আগুন ধরে।
ওই বিল্ডিং এ বাংলা ভার্সনের ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভ আর ইংরেজি ভার্সনের ক্লাস সিক্স থেকে এইটের বাচ্চাদের ক্লাস হয়।আমিও ওখানেই ক্লাস নিই।
আমি ক্লাস শেষ করে ঠিক যেখানে আগুন টা লেগেছে ওই করিডোর পার হয়ে আমাদের টিচার্স রুমে গেছি।ততক্ষণে ওই বিল্ডিং এর আশিভাগ বাচ্চারা বাড়ি চলে গেছে।
এবং তখন বিল্ডিং এ ভয়ানক শব্দ আমি কিছু বোঝার আগে দেখি ছোট ছোট বাচ্চাগুলো দৌড়ে আসছে দেখলাম তাদের সারাগায়ে আগুন।আমি কোনোরকমে ওয়াশরুমে গিয়ে পানি ঢালছি দুইতিনজনের গায়ে।এমন সময় একজন টিচারের চিৎকার করে বলছে পূর্ণিমা বের হোন।বের হোন।
রুম থেকে বের হয়ে দেখি এতো আগুন এতো আগুন,সমস্ত করিডোরে আগুন,আমার থেকে দুইহাত দূরে আগুনের মধ্যে আমার একজন সহকর্মী ছুটতে ছুটতে এসে আমার পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে বলে, আমাকে বাঁচান।তার সারা শরীর পুড়ে গেছে।
আমি স্থাণুর মতো দাড়িয়ে আছি তখনো।কেউ একজন হ্যাঁচকা টান দিয়ে আমাকে ওই জায়গা থেকে সরায় এবং বিল্ডিং এর গ্রিল ভেঙে আমাদেরকে বের করা হয়।
আমার বাচ্চাগুলোকে আমি পাঁচ মিনিট আগেও ভালো দেখে এসে পাঁচমিনিট পরে তাদের পুড়ে যাওয়া শরীর দেখে এসছি।
ভগবান এরকম দিন কেন দেখালো জানিনা,কেন আমার কোনো আঁচড় ও লাগলোনা আমার কেন কিছু হলোনা আমি জানিনা।ওই ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর মুখ আমার চোখের সামনে ভাসছে।আমার সহকর্মী দের চেহারা গুলো চোখের সামনে ভাসছে।জানিনা কাদের আর কখনো দেখতে পাবোনা।
জানিনা।কিচ্ছু জানিনা।কতমায়ের বুক আজ খালি হলো।কেন হলো,জানিনা।
কি নৃশংসতা! কি বিভৎসতা!