।। ড. মামুনুর রশীদ।।
১৭-১৮ কোটি মানুষের দেশ। আয়ের প্রধান উৎস একটা পণ্য – তৈরি পোশাক – এবং রেমিট্যান্স। নেই রপ্তানিযোগ্য কোনো খনিজ সম্পদ। বন্যায় প্রতিবছর খেয়ে যায় ফসল, গবাদি পশু, মানুষের জীবন। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, যাদেরকে ঘরে বেঁধে রাখতে চায় পুরুষ।
শেয়ার মার্কেট কিংবা ব্যাঙ্কিং খাতের প্রবৃদ্ধি খুব আহামরি ছিলনা। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হওয়ার পরেও বেশিরভাগ খাদ্যের জন্য অন্য দেশের উপর তাকিয়ে থাকতে হতো। আরবের লোকেরা মিসকিন মনে করে জাকাত এবং কোরবানির সময় দুম্বার গোস্ত পাঠাত।
পড়ালেখার জন্য জিলা পর্যায়ের কিছু স্কুল এবং শহরকেন্দ্রিক অল্প কিছু কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ভরসা। যার কারণে বেশিরভাগ মানুষ বিদেশে প্রবাসী হয়ে চলে যাওয়া পছন্দ করতো। ৮০র দশক থেকে তাই আদম ব্যবসায় ছিলো আমাদের ব্যবসাহীদের সবচেয়ে লাভজনক লগ্নি।
আর ২০২৪ পর্যন্ত কি দেখলেন?
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের চাইতে বেশি। বাংলাদেশের অর্থনতির সক্ষমতা থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, এমনকি অনেক ইউরোপিয়ান দেশের চাইতে ভালো। মাত্র ৩৮-৪০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চিতি (২০২১ সালে)।
আমাদের মেয়েরা শুধু স্কুলেই যায় না, তারা চাকুরীর বাজারে ৩৮% অংশ দখল করে ছিলো। আমাদের ছেলেরা বিদেশে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। ম্যাথ অলিম্পিয়াড বলেন আর ক্রিকেট বলেন – বিশ্ব আমাদের সমীহ করেছে।
খাদ্যে এসেছে সয়ংসম্পূর্ণতা। বন্যা হলে মিসকিনের মতো আরেক দেশের সাহায্যের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয়নি। বরং অন্য দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা সাহায্য পৌঁছে দিয়েছি।
নিজের যোগ্যতায় তৈরি করেছি দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো, যেটা সারা বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় ছিলো। সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণ করে আর্থিক শ্রেণিতে নীচে থাকা ১০% জনসংখ্যাকে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে সাবলম্বী করা হয়েছে।
বলা হচ্ছিলো, বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে।
বলা হচ্ছিলো, কখনো বিশ্বের ১১ বড় অর্থনীতি, কখনো অর্থনৈতিক বিস্ময়, আবার কখনো এশিয়ান টাইগার।
এতো অল্প সম্পদ এবং এতো বড় জনসংখ্যার দায়িত্ব নিয়ে একটা দেশ এতো অল্প সময়ে এতো উপরে আসার রেকর্ড নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ সেটা করে দেখিয়েছে।
শেখ হাসিনাই ছিলেন সেই পার্থক্যকারী।
আর সে কারণেই শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র লক্ষ্যবস্তু।