নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের ১০ শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে- দেশের এক সেরা প্রতিষ্ঠানে পড়ো তোমরা। সেরা বলেই পড়ো। কোটা বা করুণায় নয়। তোমাদের একদিন পৃথিবীর সেরাদের সেরা হবার সুযোগ ছিলো। এই স্কুলকে, নরসিংদীকে, বাংলাদেশকে পৃথিবীতে গর্বিত করার সম্ভাবনা ছিলো।
ছিলো বলছি কেন? কারণ আজ সে সম্ভাবনা প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়ায় তোমাদের পাঠদানসহ সব কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। যে আইডি কার্ডের জন্য তুমি গর্ব করতে, সেটি কেড়ে নিয়েছে।
তোমরা আজ থেকে জীবনের এমন এক রূপ দেখবে, যা একদম ভিন্ন। সার্কেল, পাড়া, পরিবার, ফেসবুক সবকিছু বদলে যাবে। দম বন্ধ হয়ে আসবে। ছটফট করবে একটানা মাসের পর মাস। নিজেকে বোঝা, পৃথিবীকে জাহান্নাম ভাববে।
জানি, তোমরা মজা করে এই স্লোগান দিয়েছো। বুঝে, ভালোবেসে স্লোগান দাওনি। তারপরও এজীবনের সেরা অর্জন তোমাদের সেই আইডি কার্ড কেড়ে নিয়েছে। এমনকি ‘পাঠদানে বিরত’ রেখে জীবন থেকেই ছিটকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করেছে। তোমাদের মজাটাও ওরা বুঝলো না! এতোটা অবিবেচক, পাষাণ ওরা!
তোমাদের মজা করে উচ্চারিত শব্দকে ওরা ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, শিষ্টাচার–বহির্ভূত, অশোভন, রীতিবিরোধী’ বলছে। অথচ তোমরা মজাটা করেছো তোমাদের স্কুলেই আয়োজিত একটি রাজনৈতিক সংগঠনের অনুষ্ঠানে, যেখানে দেশের একজন প্রধান রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন।
কি করুণ প্রতারণা তোমাদের সাথে! কেমন অসততা, ভণ্ডামি!
আসলে মজা করে স্লোগান দিয়ে তোমরা সত্যটা বের করে এনেছো। আজ তোমাদের সাথে যা হয়েছে সে অবস্থায় দেশের ছোট থেকে বড় প্রতিটি শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিটি মানুষ রয়েছে। পার্থক্য কেবল, ওরা এখনো ফেস করেনি। যে কোন সময় করতে পারে।
আচ্ছা, তোমরা ফেস করলে কেন? তোমরা কি দুর্ভাগা? নাকি তোমরাই সঠিক? শুধু প্রমাণের জন্য সময়ের অপেক্ষা? এমনকি ওই প্রতিষ্ঠানে আর পড়ার সুযোগ না পেলেও তোমাদের জীবন থেকে বিশ্বসেরা হবার একটি সুযোগও অবশ্যই হাতছাড়া হয়নি?
‘জয় বাংলা’ আসলে অনেক ভারি। যা নিয়ে তোমরা মজা করে এই অবস্থায় পড়েছো। তোমাদের মা-বাবাকে ডেকেও এখন অপমান করা হবে।
শোনো, এই ওজনটা এবার বোঝার চেষ্টা করো। মজা করার জন্য কেন এটিই বেছে নিলে? বাচ্চা দশটা ছেলের এই মজাটাকেও ওরা এতোটা ভয় পায়? এর এতোই শক্তি যে উচ্চারণ করলে বাচ্চাদের জীবনও ধ্বংস করা যায়?
কেন এর এতো শক্তি জানো? কারণ এই শব্দ দিয়ে তোমার প্রিয় এই দেশটার জন্ম নিয়েছে, যে দেশটার জন্য তুমি গুলির সামনে দাঁড়াতেও ভয় পাও না।
এমন একটি শব্দ উচ্চারণের জন্য যারা তোমাকে ধ্বংস করতে চায় তারা আসলে কারা? তারা কি চায়? তোমাকে ধ্বংসের পর কি তারা এই দেশটাকেই ধ্বংস করে দিবে না? শুধু সময়ের অপেক্ষা!
নিজেকে প্রশ্ন করো। উত্তর পেতে সাহায্য করবে তোমাদের উচ্চারিত ওই শব্দটিই। ওই শব্দই তোমাদের শক্তিশালী করবে। পৃথিবিতে সেরাদের সেরা হবার সুযোগ-সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখবে।
তোমাদের জন্য শুভকামনা। তোমাদের ‘জয় বাংলার’ শুভেচ্ছা।