রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসাবাড়িতে চালানো ভয়াবহ হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণের একটি জঘন্য উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিক সংগঠন। দেশের বিবেকবান মানুষ, রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে। সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে এ ঘটনা ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের অভিযোগ, একটি ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সামাজিক মাধ্যমে পোস্টকে কেন্দ্র করে তাদেরকে টার্গেট করে সহিংসতা চালানো হয়েছে। একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর সংগঠিত হামলা সরকারের ব্যর্থতা, প্রশাসনের নির্লিপ্ততা এবং উগ্র গোষ্ঠীর প্রশ্রয়েরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস), নারীপক্ষ এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন একযোগে এই ঘটনার নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স স্পষ্টভাবে বলেন, এমন হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বহিঃপ্রকাশ। তারা হামলার সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি নেপথ্যের মূলহোতাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আরও কঠোরভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দাবি করে, গঙ্গাচড়ার ঘটনাকে ধর্মীয় সহিংসতা হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার পেছনে কারা জড়িত, তা তদন্ত করে প্রকাশ করতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশে ‘মবতন্ত্র” প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে এবং এ অবস্থা সামগ্রিকভাবে জাতিকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বারবার মিথ্যা অভিযোগ এনে হেনস্তা ও নির্যাতনের পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে, অথচ প্রশাসন চুপ করে থাকছে।
আসক (আইন ও সালিশ কেন্দ্র) বলেছে, শুধুমাত্র এক কিশোরের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গোটা একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা অনৈতিক, বেআইনি ও মানবাধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। এইচআরএসএস বলেছে, সংখ্যালঘুদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে সরকার বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
নারীপক্ষ বলেছে, এর আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে, কিন্তু কার্যকর কোনো বিচার না হওয়ায় বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন স্পষ্ট করে বলেছে, সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং এ ব্যর্থতা রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার প্রতিফলন।
এদিকে, গঙ্গাচড়ার বর্বর ঘটনার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জীবনের নিরাপত্তা এখন বড় প্রশ্নবিদ্ধ। রাষ্ট্র যদি নিজ নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে না পারে, তবে সেই রাষ্ট্রের নৈতিক বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।’