চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে মব সহিংসতা, রাজনৈতিক সংঘাত এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
৩১শে জুলাই, বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। তারা এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই মাসে সারা দেশে অন্তত ৫১টি মব সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৬ জন নিহত এবং ৫৩ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যেই আবার ৩০ জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এমএসএফ জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতেই এসব সহিংসতা ঘটেছে, যা আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
এ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫১টি অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮টি শিশু, একজন কিশোর, ১৩ জন নারী ও ২৯ জন পুরুষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক।
জুলাই মাসে দেশে ৪৮টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেই ২৭টি ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত, বিএনপি-এনসিপি, এনসিপি-পুলিশ-আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ৯ জন নিহত এবং অন্তত ৫৮৪ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ২১ জন গুলিবিদ্ধ। শুধু গোপালগঞ্জেই এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে আওয়ামী লীগের ৫ কর্মীকে হত্যা করা হয়।
এছাড়াও সন্ত্রাসী হামলায় আরও ৪ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হন। নিহতদের সবাই বিএনপি সংশ্লিষ্ট। এ মাসে নিখোঁজ তিন রাজনৈতিক কর্মীর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে এবং দুজনের মৃত্যু ‘অস্বাভাবিকভাবে’।
এমএসএফ জানায়, জুলাই মাসে কারাগারে ১০ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, বাকি ৪ জন নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে মারা যান।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দুইজন নিহত হয়েছেন এবং প্রশাসনের লোক পরিচয়ে একজনকে খুলনা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশি হেফাজতে ভাটারা থানায় বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারীর মৃত্যু ঘটে। নির্যাতনে একজনের মৃত্যু এবং গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালাতে গিয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
জুলাই মাসে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর ৮টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি বাড়ি ভাঙচুর-লুটপাট, দুটি প্রতিমা ভাঙচুর, জমি দখল ও হেনস্তার ঘটনা। এক ঘটনায় ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৫টি বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া এক জাতিগত সংখ্যালঘু কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জুলাই মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩৫২টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণ ৫৬টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৮টি এবং ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যাকাণ্ড ৭টি। ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে পাঁচজন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর ১৯টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩০ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে ১২ জন আইনি হয়রানির, দুজন গ্রেপ্তার, ১৪ জন হামলার ও আহত হওয়ার, এবং চারজন হুমকি ও লাঞ্ছনার শিকার হন।
এমএসএফ জানায়, বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন এখনও বাতিল না হওয়ায় এর অপব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। এ আইনের অধীনে জুলাই মাসে এক সংখ্যালঘু কিশোরকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনটি মনে করে, এইসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল, নিরপেক্ষ ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি সরকার এসব ক্ষেত্রে উদাসীন। বিশেষ করে সরকারই মব লেলিয়ে দিচ্ছে এমন অভিযোগ আছে। তাই প্রশাসনের সামনে মবের ঘটনা ঘটলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়না।