কক্সবাজারের হোটেল সি পার্লে ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা।
আজ ৫ই আগস্ট, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই ‘বিশেষ বৈঠকে’ অংশ নেন দলের পাঁচ কেন্দ্রীয় নেতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এনসিপি নেতাদের কক্সবাজারের ভিডিও। কক্সবাজার বিমানবন্দরে নেমে মাস্ক পরে গোপনে নির্মাণাধীন একটি পেছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে যান এনসিপির পাঁচ নেতা।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভি ইতিমধ্যে তাদের হোটেলে প্রবেশের একটি ভিডিও প্রকাশ করে আবার বিশেষ নির্দেশে সরিয়ে ফেলে। তবে সেই ভিডিওটিও ভাইরাল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।
এই গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দিন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের প্রধান সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনীম জারা এবং আন্তর্জাতিক সেলের সদস্য খালিদ সাইফুল্লাহ।
আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে এনসিপি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পক্ষই এখনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। তবে বৈঠকের সময় ও প্রেক্ষাপট ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই-আগস্টে জঙ্গি হামলার পর রক্তক্ষয় এড়াতে ৫ই আগস্ট দেশত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ই আগস্ট ইউনূস সরকার ক্ষমতায় দখল করে অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে।
তাদের একবছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় যখন অনুষ্ঠান চলছিল, ঠিক সেসময় সাবেক মার্কিন দূতের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের গোপন বৈঠক চলছে। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।
বিএনপিসহ বিভিন্ন পক্ষ বলছে, কক্সবাজারের হোটেল সি পার্লে বসে চলেছে ‘বাংলাদেশকে ইজারায় দেওয়ার ষড়যন্ত্র’। তাদের ভাষায়, “যেভাবে কাশিমবাজার কুঠিতে বসে বাংলার স্বাধীনতা শেষ করে দেওয়া হয়েছিল, তেমনি এখানে বসে সংবিধান বাতিল করে দেশকে ডিপ স্টেটের হাতে তুলে দেওয়ার ছক কাটা হচ্ছে।”
এছাড়া সাধারণ মানুষও এর তীব্র সমালোচনা করছেন। তাদের দাবি, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদেশি প্রভুদের সঙ্গে গোপন দরকষাকষির অংশ হিসেবেই এই মিটিং।
তবে এ বিষয়ে এনসিপির নেতারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পিটার হাসের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। এনসিপি নেতাদের বরাতে গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে তারা সেখানে ‘চিল করতে’ গিয়েছিলেন।
ইতিমধ্যে জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব তাসনিম জারার স্বামী খালিদ সাইফুল্লাহ এই সফরকে ব্যক্তিগত ভ্রমণ বলে দাবি করেছেন।
এদিকে, ডিপ স্টেটের ‘অনুচর’ হিসেবে পরিচিত জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের আহ্বায়ক খোমেনী এহসান এ বৈঠকের সত্যতা জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কক্সবাজারে কোনো গোপন বৈঠক হচ্ছে না। নতুন ওয়ান ইলেভেনের বিরুদ্ধে মার্কিন সহায়তা চাইতে এনসিপির পাঁচজন গেছে৷ নাসির, হাসনাত, সারজিস, খালেদ ও জারা।’
সি পার্ল হোটেলের পক্ষ থেকে সেখানে পিটার হাসের উপস্থিতি অস্বীকার করা হয়েছে। যদিও বিডি ডাইজেস্ট-এর প্রতিনিধির কাছে ফ্রন্ট ডেস্কের এক স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগাম ঘোষণা বা রুম বুকিং ছাড়াই মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর অত্যন্ত গোপনে এনসিপির এ চার নেতা হোটেলে প্রবেশ করেন।
পিটার হাসের উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
তবে তিনি প্রতিবেদককে জানান, এখানে প্রায়ই বিদেশি কূটনীতিক বা গেস্টরা আসেন। স্বল্প সময়ের জন্য লাউঞ্জে বা কনফারেন্স রুমগুলো নির্দিষ্ট পেমেন্টের মাধ্যমে ব্যবহার করেন। দূতাবাসের কেউ অফিসিয়ালি এলে প্রটোকলের কারণে বিষয়টি জানা যেত। কিন্তু তিনি (পিটার হাস) তো দূতাবাসের কর্মকর্তা নন এখন, তাই ব্যাপারে তথ্য নেই। ঊর্ধ্বতনরা বিষয়টি জানতে পারেন হয়ত।