২০২৪ সালের তথাকথিত ‘জুলাই যোদ্ধা’দের নাম ব্যবহার করে একটি সহিংস, রক্তাক্ত, নৈরাজ্যিক ঘটনা বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছিল, যার ভয়াবহতা ও পরিণতি এখনো জাতির মানসপটে তাজা। পুলিশের রক্ত, জনগণের কান্না, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংস, আইনের শাসনের বিপর্যয় এইসবই সেই তথাকথিত ‘জুলাই বিপ্লব’-এর আসল মুখোশ।
এখন, এই ভয়াবহ ঘটনার নাটের গুরুদের দায়মুক্তি দিতে এবং ইতিহাসের দায় এড়াতে একটি গভীর চক্রান্ত চলমান। এই চক্রান্তের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ‘জুলাই সনদ’কে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব। পেছনের উদ্দেশ্য একটাই জুলাই মাসে সংঘটিত রাষ্ট্রদ্রোহমূলক, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, এবং হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া। এবং এসবের মধ্যমণি হলেন ড. ইউনুস।
ড. ইউনুস ও তার অনুগামী এনসিপি জোট বুঝে গেছে, দেশের আইনি কাঠামো তাদের পক্ষে নয়। সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই ৫ম ও ৭ম সংশোধনী বাতিল করে সামরিক শাসন ও অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৭ক যুক্ত করে যেকোনো অবৈধ ক্ষমতা দখলকে করা হয়েছে ফৌজদারি অপরাধ। অর্থাৎ ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে যারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, তারাও এই আইনের আওতায় অপরাধী।
কিন্তু এখানেই ড. ইউনুস ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিপদ। কারণ তারা জানে একবার বিচার শুরু হলে তাদের অনেকেই রক্ষা পাবে না। তাই তারা “জুলাই সনদ”-এর নামে একটি ইনডেমনিটি চুক্তি সংবিধানে প্রবেশ করিয়ে নিজেদের সুরক্ষার চাদর খুঁজছে। ঠিক যেমন ১৯৭৫ সালের পর খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল, আজ আবার ঠিক তেমনই ইতিহাসকে পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা চলছে।
তবে এখানে একটি বড় সাংবিধানিক বাধা রয়েছে। সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদ অত্যন্ত স্পষ্ট: কেবলমাত্র ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সময়কালকেই অন্তর্বর্তীকালীন হিসেব ধরে অতিরিক্ত বিধান যোগ করা যাবে। এর বাইরে কিছু সংযোজন করা যাবে না। উপরন্তু, সংবিধানের ৭খ অনুচ্ছেদ বলছে প্রস্তাবনা, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং একাদশ ভাগসহ মূল কাঠামোগত ধারাগুলো অসংশোধনযোগ্য। কাজেই এই সনদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার যে স্বপ্ন তারা দেখছে, তা পুরোপুরি অসাংবিধানিক ও বিপজ্জনক।
এত স্পষ্ট সাংবিধানিক বাধা থাকা সত্ত্বেও কেন তারা এই পথ বেছে নিচ্ছে? কারণ একটাই তারা জানে, তাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলে সেটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, একটি রাজনৈতিক শক্তিরও সমাপ্তি ডেকে আনবে। তাই “জুলাই যোদ্ধা” নামক ছদ্মবেশে তারা নিজেদের অপরাধকে বীরত্বে পরিণত করতে চায়।
কিন্তু জাতি কি এতটাই স্মৃতিহীন? যারা রাষ্ট্রদ্রোহ, সন্ত্রাস, লুটপাট, খুন, চাঁদাবাজি করেছে, তাদের কি ‘যোদ্ধা’ বলা যায়? না, এরা যোদ্ধা নয় এরা ষড়যন্ত্রকারী, ক্ষমতালোভী, ইতিহাস বিকৃতিকারী।
তথাকথিত “জুলাই সনদ” বাস্তবিক অর্থে একটি রাজনৈতিক পলায়নপত্র, যেখানে অপরাধ ঢাকতে সংবিধানকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু জাতির সঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে, শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে কেউ পার পায়নি, এবারও পাবে না।
তাই বলতেই হয় জুলাই সনদ মানে দায়মুক্তির চক্রান্ত। ইউনুস চায় সংবিধানকে ঢাল বানিয়ে অপরাধীদের রক্ষা করতে। কিন্তু এ চক্রান্তের পরিণতি ভয়াবহ হবে কারণ ইতিহাস সব কিছু লিখে রাখে, এবং বিচার একদিন হবেই। (আওযামীলীগ পেইজ থেকে।)