‘জুলাই সনদ’ একটা টিসু পেপারে পরিণত হয়েছে
আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ‘জয়বাংলা’কে এক সাক্ষাতকার দেন। জয়বাংলার প্রতিবেদক বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। প্রশ্নোত্তর পর্বটি পাঠকের জন্য এখানে তুলে দেওয়া হলো।–বার্তা সম্পাদক জয় বাংলা।
১.প্রশ্ন: বিএনপি ও তার মিত্র দলসমূহ ও বামজোট চাইতেছে, বিদ্যমান পার্লামেন্ট ব্যবস্থার নির্বাচন এবং এক কক্ষ বিশিষ্ট। কিন্তু এনসিপি, নাগরিক অধিকার পরিষদ,জামাত, খেলাফত মজলিস, হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলো চাইতেছে সংখ্যানপাতিক দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট নির্বাচন। এই অবস্থায় দেশে কি রাজনৈতিক নয়া সংকট তৈরী হলো না? শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কি হবে?
উত্তর: বাংলাদেশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ করার কোনও বাস্তবতা নেই। এটা করা হলে বরং জটিলতা বাড়বে। প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের কর্ম পরিধি আরও কমে আসবে, পক্ষান্তরে জনগণের ক্ষমতায়নের পথ আরও রুদ্ধ হবে। সিভিল সোসাইটি, বুদ্ধিজীবী ও আমলাদের আরও বেশি রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্টতা বাড়বে। নির্মোহ ও নিরপেক্ষ মানুষের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাবে। ফলে সমাজে ভারসাম্য নষ্ট হবে। পরমতসহিষ্ণু, উদার, গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্র সংকুচিত হবে।
অযথা রাষ্ট্রের রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। আমাদের মতো নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে রাজস্ব ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা একান্ত আবশ্যক। সেখানে ব্যয় বৃদ্ধির এই প্রস্তাব দেশ ও জাতির জন্য অকল্যাণকর।
২.প্রশ্ন: নির্বাচন নিয়ে দেশে যে রাজনৈতিক সংকট তৈরী করা হচ্ছে এ কী মনে হয় বিএনপিকেও কি মায়নাস করার পথে ইউনুসের রাজনীতি? দেশ কি তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে একটি গোষ্ঠী?
উত্তর: ক্ষমতা, খ্যাতি ও অর্থ লিপ্সু প্রফেসর ইউনূসের মূল টার্গেট ছিলো ক্ষমতায় দীর্ঘদিন টিকে থাকা। ১৯৭১ সালে অর্জিত স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এবং ভারতের মিজোরাম নিয়ে একটি নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। পরাশক্তির আজ্ঞাবহ এই রাষ্ট্রটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইসরায়েল ও কাতারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হত; যা চিন, ভারত, মিয়ানমার,থাইল্যান্ড সহ পুরা এলাকার ওপর আধিপত্য বিস্তার করত।
বিএনপি কেও মাইনাস করা সহ ভয়াবহ কিছু মেটিকুলাস প্ল্যান ছিলো দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুত করা ইউনুস কে দিয়ে।
কিন্তু বাংলাদেশের মাটি বড় জটিল। এখানে মীরজাফর জন্ম নেয়, সাময়িক বিজয় অর্জন করে কিন্তু এরা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। নতুন মীরজাফর প্রফেসর ইউনূসের বেলায়ও তাই হয়েছে।
বাংলার জনগণ দ্রুত তার প্রতি বিরক্ত হয়েছে, তার ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা সম্পর্কে বুঝতে পেরে দ্রুত তার অপসারণ চাচ্ছে।
এখন বাধ্য হয়ে তিনি যেনতেন একটা নির্বাচন দিয়ে পালাবার পথ খুঁজছেন।
৩.প্রশ্ন: এনসিপি ‘জুলাই সনদ ঘোষণা’ করে দেশ পরিচালনার বিধান চায়। তাদের জুলাই সনদে রাষ্ট্র পরিচালিত হলে বিদ্যমান সংবিধান অকার্যকর হয়ে যায় না? আবার সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধান সংস্কার করছে, কী হচ্ছে আপনার মনে হয়? মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার জন্যই কি এসব করা হচ্ছে?
উত্তর: যত গর্জে ততো বর্ষে না- শেষ পর্যন্ত ওদের ‘ জুলাই সনদ ‘ একটা টিসু পেপারে পরিণত হয়েছে। এই টিসু পেপার জাতি প্রত্যাখান করেছে। এর কোনও রাজনৈতিক বা সাংবিধানিক মূল্য নেই। একটা গাঁজাখোরি বিবৃতিতে পরিণত হয়েছে তাদের সনদ।
৪.প্রশ্ন: আগামী ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলে যদি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এবং যদি কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয় আওয়ামীলীগের, এতে দল কি নির্বাচনে যাবে?
উত্তর: আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল । আওয়ামী লীগের আস্থা ও আনুগত্য কেবলমাত্র বাংলাদেশের জনগন ও রাষ্ট্রের প্রতি। তবে, প্রতিহিংসার প্রতিভূ প্রফেসর ইউনূসের অধীনে আওয়ামী লীগ কোনও নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচনের আগেই প্রফেসর ইউনুস কে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে ।
৫. প্রশ্ন: ইউনুসের করিডর প্রদান, বন্দরলীজসহ দেশের স্বারভৌমবিরোধী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্যই কি শেখ হাসিনার সরকারকে আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: অবশ্যই। তবে তাদের এই আশা আর পূরণ হলো না।
৬. প্রশ্ন: আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন, জেল-জুলুম,হত্যা, নারী নির্যাতন এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন, সর্বোপরি দেশে যে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুভবন ও সহস্র ম্যুরাল গুড়িয়ে দেয়া, এটা কি একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ? না ইউনুসের ব্যর্থতা? না অন্য কোনো ষড়যন্ত্র?
উত্তর: মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, অর্জন, চেতনা, জাতির পিতার ঐতিহাসিক বাসভবন ধানমন্ডি ৩২, জাতির পিতার মুরাল, জাতির পিতার কন্যার প্রতিকৃতি, নাম, সংবিধানের ওপর আঘাত, বীর মুক্তিযোদ্ধা,
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, স্বাধীনচেতা বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সমাজকর্মীদের ওপর চলমান নির্মম নির্যাতন ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতার প্রতিশোধ। তারা এখনও পরাজয়ের গ্লানি ভোলেনি, প্রতিশোধ নিতে তারা মরিয়া।
প্রফেসর ইউনুস দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু ৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তিনি ব্যর্থ হন নি। তার মূল এজেন্ডার মধ্যে অন্যতম হলো আওয়ামী লীগ নিধন। সেটি তিনি করে হচ্ছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। তবে দিন বদলের আওয়াজ উঠেছে। তিনি আর বেশিদিন নিধন কার্য পরিচালনার সুযোগ পাবেন না।
৭.প্রশ্ন: দেশ অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় পড়েছে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে,চাকরি হারাচ্ছে মানুষ,দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে বলে জাতিসংঘ হুশিয়ারি দিয়েছে, এর ইউনুস সরকার কি দায়ী নয়?
উত্তর: প্রফেসর ইউনূসের অন্যতম এজেন্ডা হলো, বাংলাদেশকে তলা বিহীন ঝুড়িতে পরিণত করা। তিনি সুচারুভাবে সেই কাজটি করে যাচ্ছেন। বিশ্বসেরা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ-নেতৃত্বে বাংলাদেশের সকল জনগণের অন্তর্ভূক্তিমূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে চলছিল। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর টেকসই উন্নয়ন এবং বেসরকারী খাতের বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে চলছিল। পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। প্রফেসর ইউনুস গং অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়ে পড়েছে। ইউনুস যতদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন তত বেশি দেশ ধ্বংসের পথে ধাবিত হবে। প্রফেসর ইউনূসের দ্রুত প্রস্থান জাতির জন্য নতুন আশার আলো বয়ে আনবে।
৮. ড.ইউনুসের সরকার বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ। দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন হলে এই অবৈধ সরকারের কর্মকাণ্ডের জন্য কি ইউনুসের বিচার হবে?
উত্তর: অবশ্যই বিচার হবে।