শের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা আমাদের সবার জন্য অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। তবে বর্তমান সরকার এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার নানা কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানুষের আস্থাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, যারা দেশের শত্রু ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের অনেককে আজ অবৈধ সরকারের দ্বারা মুক্তি দেওয়া হয়েছে বা দমন করা হয়েছে। এর ফলে দেশের আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
জিকে শামীমকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, কিন্তু অন্যদিকে তাঁকে মুক্তি দিয়েছে বর্তমান শাসন ব্যবস্থা।
আবরার ফাহাদ হত্যার খুনিদের আমরা ধরেছি, কিন্তু আপনারা তাদের পালিয়ে যেতে দিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে রাজাকার মোবারক হোসেনকে আমরা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছি, আপনারা তাকে মুক্তি দিয়েছেন।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মূল অভিযুক্তদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি, অন্যদিকে আপনারা তাদের ছেড়ে দিয়েছেন।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধানকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, কিন্তু আপনারা তাকে মুক্তি দিয়েছেন।
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামীদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
গ্রেনেড হামলা মামলার আসামীদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
রাজাকার এটিএম আজহারকে খালাস দিয়েছেন।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা সম্পন্ন করেছি, কিন্তু আপনারা শত শত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত বিডিআর সদস্যদের ছেড়ে দিয়েছেন।
করোনাকালে রিজেন্ড শাহেদকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, কিন্তু আপনারা তাকে মুক্তি দিয়েছেন।
ব্লগার খুনিদের ধরেছি আমরা, আপনারা তাদের ছেড়ে দিয়েছেন।
ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুইডেন আসলামকে ২৭ বছর পর আপনারা মুক্তি দিয়েছেন।
যুগের পর যুগ ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যেমন পিচ্ছি হেলাল, শিবির নাছির, জাকির খান ইত্যাদি সবাইকে আপনারা ছেড়ে দিয়েছেন।
সবশেষে, ৫ আগস্টের পর দেশের সবগুলো কারাগার খালি করে দিয়ে চোর, বাটপার, দুর্নীতিবাজ, দাঙ্গাবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও ডাকাতদের মুক্তি দিয়েছে বর্তমান সরকার। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা ও আইনের শাসনের প্রতি এক মর্মান্তিক বাস্তবতা সামনে এসেছে, অপরাধীরা ক্ষমতায় প্রভাবশালী হয়ে উঠছে এবং নিরাপরাধরা অপরাধীর মেরুকরণ পাচ্ছে।
এমন অবস্থায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হচ্ছি দেশের আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি? যারা দেশের স্বার্থবিরোধী ও অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া কতটা কার্যকর হচ্ছে? বিচারবহির্ভূত ক্ষমতা বা রাজনৈতিক স্বার্থে ন্যায়বিচার পেছনে ফেলা আমাদের গণতন্ত্র ও জাতীয় স্থিতিশীলতার জন্য এক বিপজ্জনক সংকেত।
সরকারের প্রতি আমাদের স্পষ্ট আহ্বান, দেশের নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষায় অবিলম্বে কঠোর ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতিবাজ, অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের প্রতি কোনো ধরনের সহনশীলতা দেখানো চলবে না। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুসংহত হবে।
আমরা সবাই চাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, ন্যায়বিচার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক, এবং দেশের মানুষ নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে।
এখন যদি এই অবৈধ ও দেশের স্বার্থবিরোধী সরকার পদত্যাগ না করে, তবে জনগণকে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করাতে হবে। দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য একমাত্র পথ হল দায়িত্বশীল নেতৃত্ব ও শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।