।। জয় বাংলা প্রতিবেদন।।
স্যোসাল মিডিয়ায় যেভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিয়ে শোকাভিভুত মন্তব্য ও শোক, শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে, সেটি যে কোনো দিনের চেয়ে এবারে সর্বাধিক শুধু নয়, অনেকটা বিস্ময়ের।
মূল কথা, ‘সমগ্র বাংলাদেশটাই শেখ মুজিব’। শেখ মুজিব তো একটি আদর্শের নাম, এই সত্যটিই ভয়ের কারণ।
সাংবাদিক আনীস আলমগীর একটি ঠক শোতে বলেছেন, “মৃত বঙ্গবন্ধু এতো শক্তিশালী, ‘ধানমন্ডি ৩২ নাম্বর’ বঙ্গবন্ধুর ভাঙ্গা বাড়িটিও পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখতে হচ্ছে”।
এছাড়া তার ভেরিফাইড ফেইসবুক একাউন্টে লিখেছেন, ‘ব্রাশ দিয়ে দেয়াল থেকে রঙ মুছে ফেলা যায়, ছবিও মুছে ফেলা যায়—কিন্তু হৃদয়ের দাগ আর স্মৃতিকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সেই বাড়ি—শুধু একটি সাধারণ ইমারত নয়;
এটি এক জাতির হৃদয়ে খোদাই হওয়া ইতিহাস। তাই ধ্বংস হলেও ৩২ গেঁথে আছে মানুষের হৃদয়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, সেদিন শুধু একজন মানুষকে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাকে।
আজও কেউ কেউ চেষ্টা করছে তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার-
৭৫-এর হত্যার পর ২৪শে এসে দ্বিতীয়বার হত্যার মাধ্যমে। কিন্তু তারা কখনো সফল হতে পারবে না। কারণ তিনি বেঁচে আছেন কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে, মানুষের মনে।
তাই আজও ৩২ নম্বর বাড়ি তাদের আতঙ্কের কারণ; আজও তারা পাহারা দেয় যেন মানুষ সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে না পারে।
এ এক নির্লজ্জ বেহায়াপনা,
এ এক মস্তিষ্কবিস্ফোরী ঘৃণা—
যা ইতিহাসের কাছে চিরকাল লজ্জিত থাকবে।
শ্রদ্ধা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাকে ভালোবাসা বা শ্রদ্ধা জানাতে কোনো দল বা রাজনৈতিক সমর্থনের দরকার নেই। এটি আমাদের হৃদয়ের ব্যক্তিগত অনুভূতি।
দুর্গম পথই আমার অভ্যাস, আগুনকেও বানিয়েছি বন্ধু। আমি অগ্নিগিরির কাছে জ্বলতে শিখেছি—আমায় আর জ্বালানোর ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।
সাংবাদিক কবির য়াহমদ লিখেছেন, ‘ধানমন্ডির বত্রিশ ছিল রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি হিসেবে ইতিহাসের এই আঁতুড়ঘর রাষ্ট্রকে দান করে দিয়েছিলেন।
এ-বছর মব সৃষ্টি করে সেই বত্রিশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বত্রিশ এখন ধ্বংসস্তূপ; তবু বত্রিশেই ভয়। আগে যেমন ভয় পেত পাকিস্তানিরা।
একদা যেখানে বঙ্গবন্ধু ছিলেন, সেখানে এখন বঙ্গবন্ধু নেই; এমনকি নেই কোনো স্থাপনা। তবু ভয় কাটছে না।
এই জায়গাটা বঙ্গোপসাগরের তলদেশে চলে গেলেও ভয় কাটবে না এদের কোনোদিন।
উড়োজাহাজে উড়ে গিয়ে পাকিস্তানিদের জিগ্যেস করে এসো; উত্তর পাবে–এখনও মাঝরাতে ঘুম ভাঙে তাদের বত্রিশের দুঃস্বপ্নে।
ধানমন্ডির বত্রিশকে ঘিরে এটা মূলত লিগ্যাসি; পূর্বসূরি-উত্তরসূরি সব একই ধারায়।
সেনানিবাস নয়, যমুনা নয়, সচিবালয় নয়, নয় কোনো ভবন; বাংলাদেশের সবচাইতে শক্তিশালী জায়গার নাম ‘ধানমন্ডির বত্রিশ’। ধ্বংসস্তূপেও শ্রদ্ধা ঠেকাতে মব সৃষ্টি করতে হয়, পুলিশ প্রহরা বসাতে হয়। হুমকি দিয়ে শ্রদ্ধা ঠেকানোর কথা বলতে হয়। দেখো, এটা ব্যাকফায়ার করেছে। যতবার আটকাতে যাচ্ছ, ততবার বাড়ছে শক্তি এর। এই শক্তি আওয়ামী লীগের নয়, এই শক্তি মানুষের হৃদয়ের। ৩২ সংখ্যাটাই সবচেয়ে শক্তিমান। বত্রিশকে মুছতে গিয়ে বত্রিশকেই বাঁচিয়ে রেখেছে অর্বাচীনেরা। মুজিবকে কবর দিতে চাও? কবরই মুজিব হয়ে যাবে!
সাংবাদিক মনজুরুল হক লিখেছেন, ‘পুকুর খুঁড়লেও ৩২ নম্বরকে মোছা যাবে না’। যে কোনও গণতন্ত্রমনা মানুষ মাত্রই বলবে-কারও প্রতি শোক জানানো কিংবা সমালোচনা করা গণতান্ত্রিক অধিকার। ক্ষমতাবলে আপনি বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা ঠেকাতে পারেন, কিন্তু মানুষের অন্তরে যা গেঁথে রয়েছে তাকে নির্মূল করতে পারেন না। যত বেশি সেই চেষ্টা করবেন তত বেশি ৩২ নম্বর, বঙ্গবন্ধু প্রাসঙ্গিক হতে থাকবে।’