
।। হামিদ মোহাম্মদ ।।
ভায়েরা আমার, আমি জানি তোমরা আমার অপেক্ষায় অধীর হয়ে আছো।
কেউ বলছে আমি টুঙ্গিপাড়ায় শুয়ে আছি, কেউ বলে আমি মৃত শেখ মুজিব
কিভাবে আসবে আবার,জাতির উদ্দেশে কিভাবে ভাষণ দেবো আমি!
তোমাদের চোখে আমি মৃত শেখ মুজিব,টুঙ্গিপাড়ায় শায়িত।
সব-ই সত্য, ধ্রুব সত্য।
কিন্তু সত্য নয়— আমি নেই। আমি আছি. . .।
আমি নেই—সত্য নয়,সত্য নয়— বাংলার মানুষ শেখ মুজিবকে চেনে না,
শেখ মুজিব নামে কেউ ছিলো না
কেউ এমন অকাট্য মিথ্যা কথা বলবে না,বলতে পারে না। আমি আছি. . .।
ভায়েরা আমার,
বাংলার মানুষ যুদ্ধ করে পাকিস্তানি হানাদারদের পরাস্ত করেছে ,শত্রুরা
পরাজিত হয়েছে সত্য,
কিন্তু ওরা, ওদের প্রেতাত্মারা ঘাপটি মেরে আছে, ছোবল মারবে সুযোগ পেলেই।
আমি তাও বলেছিলাম—চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি।
ওরা দেশে লুটপাট শুরু করে,দুনীর্তিবাজ আর ঘুষখোর হয়ে আর্বিভূত হয়
বাংলার মানুষকে অতিষ্ট করে তোলে,মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে এদের দাপটে।
আমি বলেছিলাম, আমি ভিক্ষা করে আনি—আর ওরা লুট করে নেয়,
ফাঁসির মঞ্চ থেকে যখন ফিরে এসেছি,দুখী মানুষের মুখে যখন হাসি ফোটাতে চেয়েছি
হাসি ফোটাবোই, বাংলার প্রকৃত শত্রুদের নির্মূল করে ছাড়বোই—ইনশাল্লাহ!
আমার স্পষ্টবাদিতার জন্যে, আমার দৃঢ়তার জন্যে,আমার অঙ্গীকারের জন্যে,
উদাত্ত ভালোবাসার জন্যে,বাংলার মানুষের মুক্তির যুদ্ধ শুরু করার জন্যে,
আমি শরীরী শেখ মুজিবকে তারপর রেহাই দিলো না, আমাকে মেরে ফেললো ওরা
বোকার দল—বুঝলো না—ঝাঝরা করে দিলো আমার বাংলার মানুষের ঘামে কেনা
অস্ত্রের গুলিতে আমার বুক।
কিন্তু তারপর! তারপর!!
লক্ষ কোটি মুজিব হয়ে গেলাম আমি,
ষোলকোটি মুজিব হয়ে ছড়িয়ে গেলাম মানচিত্রের আনাচে কানাচে
আমার রক্তে নাচলো আবার পদ্মা মেঘনা যমুনা
বাতাসে উঠলো ধ্বনি
ওরে ভয় নাই ভয় নাই,উদয়ের পথে শুনি যার বাণী
মুজিব নামে কেউ মরে নাই মরে নাই।
ভায়েরা আমার—
আজ ২০২৫ সাল, কোথায় গোলাম আযম, নিজামী,মোজাহিদ,জিয়া মওদুদীর সাগরেদ
আর আমার ছায়ায় যে থাকতো মুস্তাক—ডালিম,রশিদ গং আমেরিকার চর
এমনকি সাকা চৌধুরী —আত্মীয়তার মিথ্যা গল্প করতো যে পাকিস্তানি চর
বাংলার মানুষ ক্ষমা করে নাই,নিস্তার দেয় নাই—ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে এক দুই তিন…।
আমি অশরীরী শেখ মুজিব বলছি—আমি শেখ মুজিবের আত্মা বলছি,
আমি প্রত্যাবর্তন করেছি— কে বলছে আমি আসতে পারবো না,আসবো না বাংলায়!
যতই ভাঙুক আমার ভাস্কর্য, তচনচ করুক ৩২ নম্বর, পুড়িয়ে দিক,
ম্যুরাল ভেঙে ফেলুক
ওদের আশা,ওদের স্বপ্ন মিথ্যা প্রমাণ করে
আমি আবার সোরহওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়েছি,
আমি আবার বাংলার মানুষের সামনে দাঁড়িয়েছি
আবার তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ,সুন্দরবন থেকে জাফলং
আমি প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ঘরে
ফুল হয়ে,পতাকা হয়ে
সবুজ প্রান্তর হয়ে,
ধানি জমি হয়ে,
শ্রমিক কৃষকের ঘাম হয়ে,
নৌকার পাল হয়ে,
মাঝির কণ্ঠে সারি,ভাটিয়ালি, বাউল গান
উল্লাসে, সংকটে আমি সমাগত,সমাসীন,সচিত্র, হৃদায়সনে খোদিত
সব মানুষের প্রাণে আমি প্রাণিত,উদ্বেলিত।
আমি শেখ মুজিব, যাকে তোমরা বঙ্গবন্ধু বানিয়েছো—
আমি বাংলার ঘরে ঘরে কখনো পতাকা কখনো জাতীয় সঙ্গীত
আমার পাশে রবীন্দ্রনাথ,নজরুল,সুকান্ত এবং জীবনানন্দ দাশ
এবং আমার বুকে ষোলকোটি বাঙালি—যারা দেশকে বিশ্বে বাংলাদেশ বানায়
আর. . . জেনে রাখো—
বাংলার মানুষকে ধাবায় রাখতে পারে এমন শক্তি পৃথিবীর বুকে নাই
জয়বাংলা।