বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এ বি এম রওশন কবীরের বরাতে গণমাধ্যমকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে গত এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাটি ইতিহাসের সর্বোচ্চ মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে!
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৩৭ কোটি টাকার মুনাফা অর্জন করেছে। যা সংস্থার ৫৫ বছরের ইতিহাসে অনন্য রেকর্ড। পূর্বের সর্বোচ্চ মুনাফা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে, যা ৪৪০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
যদিও পদ্মা অয়েল কর্তৃপক্ষ এই মুনাফা অর্জনের আনন্দের ওপর পানি ঢেলে দিয়ে জানিয়েছে, তারা বিমান থেকে জেট ফুয়েল বিক্রির প্রায় ২১০০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। অথচ এই অর্থ পরিশোধ না করেই বিমান মুনাফা ঘোষণা করে বসে আছে!
প্রসঙ্গত, পদ্মা অয়েল বাংলাদেশে একমাত্র জেট ফুয়েল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং এটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী সংস্থা।
বিপিসির দায়িত্বশীল জনৈক কর্মকর্তা জানান, জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে পদ্মা অয়েলের বকেয়া প্রায় ২১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সামান্য কিছু পরিশোধ হলেও এখনও বকেয়ার পরিমাণ ২০০০ কোটি টাকার নিচে নয়।
বিবৃতিতে বিমানের দাবি, রেকর্ড মুনাফার পেছনে তাদের দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কার্যকর কৌশল এবং যাত্রীসেবার ধারাবাহিক উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার আয় দিয়ে যাত্রা শুরু করা বিমান আজ ১১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকার আয়ের একটি আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক সংস্থা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানের কার্যক্রমে যাত্রী পরিবহন হয়েছে ৩.৪ মিলিয়ন, কার্গো পরিবহন ৪৩ হাজার ৯১৮ টন এবং কেবিন ফ্যাক্টর ৮২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রির রেকর্ডও তৈরি হয়েছে।
বিমান বহরের বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে ১৯টি নিজস্ব মালিকানাধীন, যার মধ্যে রয়েছে আধুনিক জ্বালানি-সাশ্রয়ী বোয়িং ৭৮৭-৮ ও ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার। সংস্থার নিজস্ব লাইন মেইনটেন্যান্স সুবিধা থাকায় উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ দেশেই সম্পন্ন করা হয়, যা ব্যয় সাশ্রয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
উল্লেখ্য, ড্রিমলাইনারসহ বিমানের অত্যাধুনিক সকল উড়োজাহাজ সংগৃহীত হয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়।
যদিও বিমানের দাবি, ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন ব্যবস্থাপনা, কার্যকর সম্পদ বণ্টন ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে রেকর্ড মুনাফায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু পদ্মা অয়েলের বকেয়ার তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ইউনূস সরকারের এই লোক-দেখানো কৃতিত্বের দাবি নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে।