গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত তিস্তা সেতুতে চুরির ঘটনা যেন থামছেই না। শুক্রবার রাতে ল্যাম্পপোস্টের ৩১০ মিটার বৈদ্যুতিক তার চুরির পর শনিবার গভীর রাতে আবারও রিফ্লেক্টর লাইট চুরি হয়েছে। রোববার দুপুরে বিষয়টি সেতু কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
ঘটনার পর থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও একের পর এক সমালোচনা চলছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, টানা চুরির জন্য মূলত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং সেতু এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকাই দায়ী।
চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী জানান, রিফ্লেক্টর লাইট হারানোর খবর তিনি সম্প্রতি জেনেছেন এবং স্থানীয় পুলিশকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছে। এর আগে ল্যাম্পপোস্টের তার চুরির ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ অপরাধীদের শনাক্তে চেষ্টা চালাচ্ছে এবং নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, “চুরির ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত হচ্ছে। চোরচক্রকে শনাক্ত করতে কাজ চলছে। পাশাপাশি যানজট নিরসন ও সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু ও সংযোগ সড়কে ন্যূনতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রতিদিন হাজারো যানবাহন ও যাত্রী সেতু দিয়ে চলাচল করলেও সন্ধ্যা নামতেই সেতু এবং আশপাশের সংযোগ সড়ক অন্ধকারে ঢেকে যায়। এতে দুর্ঘটনা ছাড়াও চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
এর আগে দক্ষিণ পাশের সংযোগ সড়কের ৮টি লাইটপোস্ট থেকে প্রায় ৩১০ মিটার তার কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় সেতুর সিকিউরিটি ইনচার্জ নুরে আলম বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন, যেখানে প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়।
পরীক্ষামূলকভাবে ১৩ই জুন সব লাইট জ্বালানো হলেও তার চুরির কারণে পরে আলো জ্বলেনি। এমনকি উদ্বোধনের রাতেও অন্ধকারে ছিল সেতুটি। পরদিন চায়না সাসেক প্রকল্পের কর্মীরা খোঁজ নিয়ে চুরির বিষয়টি শনাক্ত করেন।
২০শে আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হওয়া তিস্তা সেতুটি ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ এবং ৯.৬ মিটার প্রস্থের। এতে ৩১টি স্প্যান রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এলজিইডি, অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওফিড)। প্রকল্পের জন্য প্রায় ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং উভয় পাশে ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই সেতু গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাটকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করেছে। এর ফলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার কমেছে এবং ভ্রমণ সময় সাশ্রয় হচ্ছে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা। শুধু দুই জেলার মানুষের জীবনমানই নয়, উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।