
।।মাহবুবুর রহমান।।
খবরে প্রকাশ, ডাকসুর নির্বাচনে ভিপি প্রার্থীদের সবাই মাদ্রাসার ছাত্র! মারহাবা! লালবদর জমানার খাঁটি উন্নয়ন!!
সরকারী দফতরগুলোর বড় বড় চেয়ারেও দেখি হুজুরদের। নিশ্চয়ই যোগ্যতাবলে! সিলেটে সাদা পাথর লুটপাটের খবরে মিডিয়া সরগরম। টিভিতে দেখলাম ক্যামেরার সামনে এক হুজুর। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছেন। ভাবলাম মসজিদের কোন ইমাম বা স্কুলের শিক্ষক! পরে জানলাম, তিনিই প্রতাপশালী জেলা প্রশাসক। অবশ্য তাঁকে সরিয়ে সে জায়গায় দেয়া হয়েছে ঢাকার এক সময়ের বহু আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমকে।
মজার ব্যাপার হলো, ক্ষমতা নিয়ে কামড়া-কামড়ি হলেও পাথর লুটপাটে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা সহ সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ছিল অভূতপূর্ব মিল-মহব্বত।
গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার পর এক হুজুরকে দেখলাম বাসার ড্রয়িং রুমে ক্যামেরার সামনে কথা বলছেন। বলছেন, প্রাথমিক খবরে জানা যায়,’হানিট্র্যাপ’ই ছিল হত্যার কারণ। ভাবলাম, তিনি নিহত সাংবাদিকের আত্মীয়-স্বজন হবেন। পরে দেখি,তিনি প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর নামাজে ইমামতি করে জানান দিলেন, তিনি কে?
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন আমাদের সৈয়দ মুজতবা আলী। তাঁর বিখ্যাত চরিত্র ‘আব্দুর রহমানের’ কথা ভুলতে পারি না। সে সময় বহু উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তি প্রার্থী ছিলেন, তাদের কাউকে না নিয়ে মুজতবা আলীকেই নিয়োগ দিয়েছিলেন ভাইস-চ্যান্সেলর। বলেছিলেন, ডঃ আলীর সার্টিফিকেটে এমন একজনের স্বাক্ষর আছে, যা অন্য কারো নেই। তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ষাটের দশকের এক ছবি মন ও চোখের আড়াল করতে পারি না। স্কার্ট পরিহিত ছাত্রীদের বিশ্ববদ্যালয় প্রাঙ্গণে সরব পদচারণা। বর্তমান কাবুলে চিন্তা করা যায়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কি হবে, আপনাদের কারো কোন ধারণা আছে?
মৃক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছি, আওয়ামী লীগের সদস্য কখনো ছিলাম না। গত এক বছরের লেখালেখিতে সমালোচকদের কাছে আমার পরিচয় দাঁড়িয়েছে ‘দলকানা সাংবাদিক’ ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’। এতে আমি অখুশী নই। ভন্ডামী কখনো করিনি, রং বদলানো গিরগিটিও নই। আহমদ ছফার কথা স্মরণ করি, যখন জিতে আওয়ামী লীগ একাই জিতে, হারলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল হারে। আমরা হেরে গেছি। রাজাকাররা জিতে গেছে। এখন দশ পক্ষ বলে কিছু নেই। মাত্র দু’টি পক্ষ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ এবং বিপক্ষ। মাঝামাঝি কিছু নেই। আমার সকল লেখার লক্ষ্য একটাই-একাত্তরে ফিরে যাওয়া, একাত্তরকে ফিরে পাওয়া। যারা সাতচল্লিশে ফিরে যেতে চায়, তারা রাজাকার। এখন আমার লেখা যদি শেখ হাসিনার পক্ষে যায়, যাক। আমি খুশী।
আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ চাই, যা হবে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক। মৌলবাদ জঙ্গীবাদকে আমরা ঘৃণা করি। ঘৃণা করি সকল বর্বরতা।
এখন পাইকারী হারে ট্যাগ লাগাচ্ছে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’। যারে-তারে। ক’দিন পর নিজেরা ছাড়া এই সম্মানের(?) জন্য কাউকে খুঁজে পাবে না। এই প্রসঙ্গে রাজার গল্পটা বলি। মন্ত্রীর পরামর্শে প্রজাদের আনুগত্যের জন্য রাজা তাঁর সকল প্রজাকে এক ধরনের বিশেষ পানীয় পান করান। এই পানি খেয়ে সব প্রজারা রাজাকে বলতে লাগলো ‘পাগল’। রাজা বলেন প্রজারা পাগল। দেশতো চলে না। মন্ত্রী পরামর্শ দিলেন, বাদশাহ এই পানীয় পান করে আপনিও পাগল হয়ে যান। সবাই আমরা পাগল।’
‘রাজাকার’ পরিচয় গোপনকারী এক বন্ধু বলেছেন, আমার লেখা পড়ে লোকজন নাকি হাসাহাসি করে। আপনাদের এমন কিছু মনে হলে প্লিজ আমাকে জানাবেন। ‘মারথাবা’ বলবো না, বলবো ‘মারহাবা’!
-লেখক নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক।