প্রিয় দেশবাসী,
২৭ই আগস্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম প্রয়াণদিবসে তাঁর প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা। বিদ্রোহ ও সাম্যের কবি নজরুল এবং বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তাঁর লেখা কবিতা ও গান ধুমকেতুর মতো জাগিয়ে তুলেছিল ভারতবাসীকে। সকল রকম নিপীড়ন, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ, পরাধীনতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠী এই কবি লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, গান, গল্প ও উপন্যাস। মাত্র ২৩ বছরের তাঁর সাহিত্যজীবনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য অমূল্য সম্পদ। তৎকালে অবহেলিত বাঙালি মুসলমান সমাজের প্রধান সাংস্কৃতিক আইকন।
সম্মানিত দেশবাসী,
১৯৫৪ সালে কবি তখন অসুস্থ। স্বল্পকালীন কলকাতা সফরকালে অসুস্থ কবিকে দেখতে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তী রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু কবি নজরুলকে উদ্ধৃত করেছেন উদারচিত্তে। এই বাংলাকে তিনি ‘নজরুলের বাংলা’ বলেও অভিহিত করেন। ‘জয় বাংলা’স্লোগান এবং এই ভূখণ্ডের নাম ‘বাংলাদেশ’ কবি নজরুলের লেখা থেকেই গ্রহণ করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরে প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠকে কবি নজরুলের ‘চল চল চল’ গানকে জাতীয় রণসংগীত হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এরপরে কবিকে ১৯৭২ সালের ২৩ মে কবিসহ পরিবারের সদস্যদের ঢাকা নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু। কবি নজরুলকে বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের ঐতিহাসিক রূপকার হিসেবেও সম্বোধন করেন জাতির পিতা। অসাম্প্রদায়িক কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি মর্যাদাদানের মাধ্যমে বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক রূপান্তর ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
মুক্তিকামী দেশবাসী,
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে, যখন আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে, যখন দেশবিরোধী অপশক্তি সুপরিকল্পিতভাবে বাঙালি সংস্কৃতিকে নিষ্প্রাণ করে দিচ্ছে, তখন আমাদের নজরুলচর্চা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এই ক্রান্তিকালে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের মতো আমাদেরও কাজী নজরুল ইসলামের কাছ থেকে শক্তি ও প্রেরণা নিতে হবে। বাঙালির আত্মপরিচয় ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে দেশবিরোধী অপশক্তির কবল থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে।
জাতীয় কবি বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি আবারও তাঁর স্মৃতি ও সৃষ্টির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। আঁধার কেটে ভোর হোক বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।