১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রিন্সেস ডায়ানা। তিনি ছিলেন বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রথম স্ত্রী। মৃত্যুর ২৮ বছর পরও তিনি সারা বিশ্বের মানুষের মনে রানি হিসেবে বেঁচে আছেন। তাঁকে নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন।
।। মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম।।
দিনটি ছিল ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট। সেদিন সকালে একটি খবর পুরো বিশ্বের মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। ব্রিটিশ রাজকুমারী ডায়ানা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তাঁর এই মৃত্যুর খবর মেনে নিতে পারেননি কেউই।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ডায়ানা। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তাঁকে বলা হতো বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতিমান নারী। রূপ, লাবণ্য আর ফ্যাশনসচেতনতার কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্টাইল আইকন।
নানা নকশার পোশাক পরতে পছন্দ করতেন ডায়ানা। ডায়ানার সৌন্দর্য ছিল অন্যদের থেকে আলাদা শুরু থেকেই চার্লস আর ডায়ানার সম্পর্কে ছিল জটিলতা।
অন্যদিকে এইডস রোগ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরি, অসুস্থ শিশুদের পাশে দাঁড়ানো এবং ভূমি মাইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ নানা জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছিলেন বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয়ে। রাজপরিবারের প্রথা ভেঙে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন।
সরকারি তদন্তে ডায়ানার মৃত্যুকে দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তাঁর গুণগ্রাহীদের দাবি ছিল, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২০০৩ সালে ডায়ানার এক চিঠি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। আরও জোরালো হয় ওই দাবি। কী ছিল সেই চিঠিতে? আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, রাজপরিবারের ষড়যন্ত্র, নাকি নিছক দুর্ঘটনা—কেনই–বা এত অল্প বয়সে মর্মান্তিক মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হলো ডায়ানাকে?
রূপকথার বিয়ে
রাজকুমারী ডায়ানা ১৯৬১ সালের ১ জুলাই যুক্তরাজ্যের নরফোক কাউন্টির স্যানড্রিংহামের পার্ক হাউসে এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মা–বাবার দেওয়া নাম ছিল ডায়ানা ফ্রান্সিস স্পেন্সার।
তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লসের (বর্তমান রাজা) সঙ্গে ডায়ানার পরিচয় হয় ১৯৭৭ সালে। তখন ডায়ানার বয়স মাত্র ১৬ বছর এবং চার্লসের বয়স ২৯। সে সময় অবশ্য ডায়ানার বড় বোন লেডি সারার সঙ্গে প্রেম করছিলেন চার্লস।
সুইজারল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুল থেকে শিক্ষাজীবনের পাট চুকিয়ে লন্ডনে ফিরে একটি কিন্ডারগার্টেনে স্কুলশিক্ষিকার চাকরি নেন ডায়ানা। সে সময় যুবরাজ চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার প্রেমের গুঞ্জন ছড়াতে শুরু করে।
তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লসের (বর্তমান রাজা) সঙ্গে ডায়ানার পরিচয় হয় ১৯৭৭ সালে। তখন ডায়ানার বয়স মাত্র ১৬ বছর এবং চার্লসের বয়স ২৯। সে সময় অবশ্য ডায়ানার বড় বোন লেডি সারার সঙ্গে প্রেম করছিলেন চার্লস।
অবশেষে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চার্লস ও ডায়ানার বাগ্দানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। ওই বছরের ২৯ জুলাই সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রালে মহাধুমধাম করে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত এই বিয়ে গণমাধ্যমসহ সাধারণ মানুষের কাছে ‘রূপকথার বিয়ে’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিল। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭৫ কোটি মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় এই বিয়ের অনুষ্ঠান দেখেছেন। তবে রূপকথার গল্পের মতো সুখের ছিল না ডায়ানার দাম্পত্য জীবন। বিয়ের কয়েক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই জীবনে বিষাদের ছায়া নেমে আসে।
সাবেক প্রেমিকা ক্যামিলা পার্কার বোলসের সঙ্গে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন চার্লস। আর তা নিয়ে শুরু হয় দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েন। রাজপরিবারে নানা অবহেলার শিকারও হন ডায়ানা। শেষমেশ ১৯৯৬ সালে তাঁদের বিবাদবিচ্ছেদ হয়।
কী ঘটেছিল সেই রাতে
১৯৯৭ সালে রাজকুমারী ডায়ানার একটি ছবি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। ওই ছবিতে একটি বিলাসবহুল ইয়টে (জলযান) ডায়ানার পাশে এক ব্যক্তির ছবি গণমাধ্যমের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে। ওই ব্যক্তির নাম দোদি আল–ফায়েদ। পেশায় একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক। তাঁর বাবা মোহাম্মদ আল–ফায়েদ মিসরীয় ধনকুবের।
তৎকালীন ব্রিটিশ যুবরাজ চালর্সের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর দোদি আল–ফায়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান ডায়ানা। ১৯৯৭ সালের আগস্টে অবকাশযাপনের জন্য ইতালির সার্দিনিয়া দ্বীপে নৌবিহারে যান তাঁরা।
১৯৯৭ সালে রাজকুমারী ডায়ানার একটি ছবি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। ওই ছবিতে একটি বিলাসবহুল ইয়টে (জলযান) ডায়ানার পাশে এক ব্যক্তির ছবি গণমাধ্যমের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে আসে। ওই ব্যক্তির নাম দোদি আল–ফায়েদ।
ওই নৌবিহারে পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দী হন। বিপুল অঙ্কের অর্থে বিক্রি হয় সেই ছবি। সংবাদমাধ্যমে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে ছাপা হতে থাকে চটকদার সব খবর। এর পর থেকে পাপারাজ্জি এবং সংবাদমাধ্যমগুলো ডায়ানা ও দোদির একটি ছবির জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকত। কে কার আগে সে ছবি ছাপতে পারবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতাও ছিল তুঙ্গে।
ওই বছরের ৩০ আগস্ট ডায়ানা ও দোদিকে নিয়ে ইতালি থেকে একটি উড়োজাহাজ প্যারিসের লা বুরজে বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের বাইরে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন পাপারাজ্জিরা।
পাপারাজ্জিদের উৎপাতে ততদিনে বিষিয়ে উঠেছে ডায়ানার জীবন। তাই তাঁদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ ডায়ানা ও দোদিকে নিয়ে একটি গাড়ি প্যারিসের হোটেল রিৎজের সামনে এসে থামে। হোটেলটি দোদি আল–ফায়েদের বাবার।
ফলে ওই হোটেলে ডায়ানা–দোদির জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল কড়া। কিন্তু ততক্ষণে সেখানেও পাপারাজ্জিদের ভিড় জমে যায়। ফলে পেছনের রাস্তা দিয়ে তাঁরা হোটেলে প্রবেশ করেন।
ডায়ানার গুণগ্রাহীসহ অনেক গণমাধ্যম এটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলতে নারাজ ছিলেন। অনেকের কাছে এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর সমর্থনে সামনে আসতে থাকল একের পর এক ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বা কন্সপিরেসি থিওরি।
হোটেল রিৎজে আগে থেকেই দোদি ও ডায়ানার জন্য একটি ইম্পেরিয়াল স্যুট বুক করা ছিল। তাঁরা সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর পৌনে ৬টার দিকে দোদি একাই হোটেল থেকে বের হন।
প্যারিসের একটি বিখ্যাত গয়নার দোকান থেকে দোদি দুটি আংটি কিনে হোটেলে ফেরেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ডায়ানাকে নিয়ে হোটেল থেকে কিছু দূরে অবস্থিত দোদির নিজ অ্যাপার্টমেন্টের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে গাড়িটি তাঁদের নিয়ে আবার হোটেলে ফিরে আসে।
রাত ১২টা ১০ মিনিট। তখন ক্যালেন্ডারের পাতায় ৩১ আগস্ট। হোটেল রিৎজের সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। সেটিতে বসে ছিলেন দোদির গাড়িচালক। দেখে মনে হচ্ছিল, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দোদি ও ডায়ানা হোটেল থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠবেন।
পাপারাজ্জিরা ছবি তোলার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ১০ মিনিট অতিক্রম হওয়ার পরও কেউ হোটেল থেকে বের না হওয়ায় তাঁরা বুঝতে পারেন, তাঁদের চোখে ধুলো দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন খবর পান, হোটেলের পেছনের দরজা দিয়ে ডায়ানা ও দোদি বেরিয়ে গেছেন। সঙ্গে সঙ্গে পাপারাজ্জিরা মোটরসাইকেলে তাঁদের পিছু নেন।
রাত ১২টা ২০ মিনিটে একটি কালো মার্সিডিজ গাড়িতে করে হোটেল থেকে বের হন ডায়ানা ও দোদি। হোটেল রিৎজের নিরাপত্তা কর্মকর্তা হেনরি পল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। এ সময় গাড়িতে দোদির দেহরক্ষী ট্রেভর রিস জোনসও ছিলেন। তাঁদের কেউই সিটবেল্ট পরেননি। পাপারাজ্জিদের হাত থেকে রক্ষা পেতে হেনরি পল গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন।
নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে তিন গুণ বেশি গতিতে গাড়িটি চলছিল বলে জানা যায়। একপর্যায়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারান পল। হোটেল থেকে বের হওয়ার মাত্র তিন মিনিটের মাথায় প্যারিসের পন্ত দে ল’আলমা সুড়ঙ্গপথের একটি কংক্রিটের পিলারে গাড়িটি আছড়ে পড়ে দুমড়েমুছড়ে যায়। সে সময়ও পাপারাজ্জিরা ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন।
ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দোদি ও গাড়িচালক হেনরি পল। বেঁচে যান দেহরক্ষী ট্রেভর। হাত, ঊরু এবং বুকে মারাত্মক আঘাত পান ডায়ানা। কিন্তু তখনো বেঁচে ছিলেন তিনি। জরুরি চিকিৎসক ঘটনাস্থলে এসে ডায়ানাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরপর তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাত ২টায় যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ডায়ানার দুর্ঘটনার খবর পান। ঠিক একই সময় হাসপাতালে চিকিৎসকেরা ডায়ানার অস্ত্রোপচার শুরু করেন। কিন্তু সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও তাঁরা ডায়ানাকে বাঁচাতে পারেননি। ভোররাত ৪টার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যু নিয়ে রহস্য
ডায়ানার মৃত্যু নিয়ে জনমনে ধীরে ধীরে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করতে থাকে, মেলতে শুরু করে গুজবের ডালপালা। প্রাথমিক তদন্ত ও চিকিৎসকদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বলা হয়, পাপারাজ্জিদের হাত থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া গাড়িচালক হেনরি পল ওই রাতে মাত্রাতিরিক্ত মদ পান করেছিলেন বলেও কথা উঠেছে। তাঁর রক্তে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন গুণ বেশি অ্যালকোহলের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। পাশাপাশি তিনি ডিপ্রেশনের ওষুধও সেবন করেছিলেন।
তবে ডায়ানার গুণগ্রাহীসহ অনেক গণমাধ্যমকর্মী এটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলতে নারাজ ছিলেন। অনেকের কাছে এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর সমর্থনে সামনে আসতে থাকল একের পর এক ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব।
অবশেষে ব্রিটিশ মেট্রোপলিটন পুলিশ ২০০৪ সালে এ দুর্ঘটনার তদন্তে নামে। তদন্ত কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন পেজেট’। অপারেশন পেজেটে ডায়ানার মৃত্যু নিয়ে ১৭৫টি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খতিয়ে দেখা হয়।
সর্বপ্রথম অভিযোগ ওঠে খোদ যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের বিরুদ্ধে। ১৯৯৫ সালে বিবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক মার্টিন বশির ডায়ানাকে বলেন, আপনার কি মনে হয়, আপনি কোনোদিন রানি হতে পারবেন? উত্তরে ডায়ানা বলেছিলেন, না, আমি তা মনে করি না। আমি চাই মানুষের হৃদয়ের রানি হতে, মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে।’
১০ মার্চ ২০২৫
প্রিন্সেস ডায়ানা সম্পর্কে সাবেক প্রেমিক এমন কিছু তথ্য ফাঁস করলেন, যা বিশ্ব আগে জানত না
সেদিন সাক্ষাৎকারে ডায়ানা আরও বলেছিলেন, ‘কিন্তু আমি এই দেশের রানি হতে পারব বলে মনে করি না। আমার মনে হয়, অনেক মানুষ আমাকে রানি হিসেবে দেখতে চায় না। অনেক মানুষ বলতে আমি রাজপরিবারকে বোঝাচ্ছি, যেখানে আমার বিয়ে হয়েছে। কারণ, তারা আমাকে অযোগ্য বলেই ধরে নিয়েছে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ডায়ানা বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি একধরনের হুমকি। মানে, তারা আমাকে কোনো না কোনোভাবে হুমকি মনে করে…আমার ধারণা তারা চায়, আমি তাদের পথ থেকে সরে যাই। কিন্তু আমি চুপচাপ হারিয়ে যাব না। এটাই সমস্যা।’
ডায়ানার এমন আশঙ্কার কারণে সে সময় অনেকেই বলেছিলেন, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
অন্যদিকে দোদি আল–ফায়েদের বাবা মোহাম্মদ আল–ফায়েদ অভিযোগ তোলেন, প্রিন্স ফিলিপের নির্দেশে ডায়ানা ও দোদিকে হত্যা করা হয়েছিল। কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই তিনি বলেন, দোদির সন্তানের মা হতে যাচ্ছিলেন ডায়ানা।
প্রিন্স ফিলিপ যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা বাহিনীকে ডায়ানাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ তোলেন আল–ফায়েদ। কারণ, প্রিন্স ফিলিপ চাননি রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী উইলিয়াম হ্যারির মা ডায়ানা একজন মুসলিমকে বিয়ে করেন এবং তাঁর সন্তানের মা হন।
অন্য একটি ষড়যন্ত্রতত্ত্বে দাবি করা হয়েছিল, ডায়ানা নিহত হওয়ার পেছনে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্সের হাত ছিল। অভিযোগ ওঠে, গাড়ির চালক হেনরি পল আসলে ফরাসি ও ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সেই ষড়যন্ত্রতত্ত্ব অনুযায়ী, দুর্ঘটনার রাতে হেনরি পল ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ির গতি অত্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই তত্ত্বের সমর্থকেরা দাবি করেন, ব্রিটিশ রাজপরিবার নাকি ডায়ানার দোদি আল–ফায়েদের সঙ্গে সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না। কারণ, এতে রাজকীয় রক্তধারার উত্তরসূরিদের প্রশ্নে বিতর্ক তৈরি হতে পারত। তাই গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে দুর্ঘটনাটিকে ‘পরিকল্পিত’ করে তোলা হয়েছিল।
চিঠিতে দুর্ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী
প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুকে ঘিরে সবচেয়ে আলোচিত ষড়যন্ত্রতত্ত্বগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তাঁর নিজের লেখা একটি চিঠি, যেখানে তিনি নিজের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছিলেন।
ডায়ানার ঘনিষ্ঠজন ও সাবেক পরিচারক পল ব্যারেল দাবি করেন, ১৯৯৬ সালে অর্থাৎ মৃত্যুর এক বছর আগে ডায়ানা তাঁকে একটি হাতে লেখা চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে ডায়ানা স্পষ্ট ভাষায় লিখেছিলেন, তিনি আশঙ্কা করছেন, তাঁর গাড়িতে একটি দুর্ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেখানে তাঁর গাড়ির ব্রেক কেটে দেওয়া হবে এবং তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পাবেন।
চিঠিতে ডায়ানা আরও উল্লেখ করেন, এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো তাঁকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া, যাতে চার্লস আবার বিয়ে করতে পারেন।
এই চিঠিটি পল ব্যারেল প্রথমে গোপন রেখেছিলেন। পরে ২০০৩ সালে নিজের লেখা বই ‘আ রয়াল ডিউটি’ প্রকাশের সময় চিঠির বিষয়বস্তু সামনে নিয়ে আসেন। এতে বিশ্বজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং ডায়ানার মৃত্যু নিয়ে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আরও জোরালো হয়।
অপারেশন পেজেট চিঠিটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। তবে দীর্ঘ তদন্তের পরও এটিসহ সব ষড়যন্ত্রতত্ত্ব নাকচ করে দেওয়া হয়। সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়, ডায়ানার মৃত্যুর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র নেই, বরং চালক মদ্যপ অবস্থায় দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোয় এ দুর্ঘটনা ঘটে।