চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনা হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড গড়ার এক খবর ঘুরছে অন্তর্জালে। যা ইউনূস সরকারের সাফল্য হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু আসলে কি এমন কোনো রেকর্ড হয়েছে? একটু খতিয়ে দেখতেই ধরা পড়ল শুভঙ্করের ফাঁকি, বেরিয়ে এলো থলের বিড়াল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়েছে, চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড-সিডিডিএল গত ৭ই জুলাই থেকে এনসিটি ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর বার্থ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে এনসিটিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন জাহাজ পয়েন্ট, ডেলিভারি পয়েন্ট, অ্যাপ্রাইজমেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ শেড এবং গেটে দক্ষ ব্যবস্থাপনার ফলে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে গতি এসেছে।
গতকাল ২৯শে আগস্ট, সিডিডিএল সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে এনসিটিতে একদিনের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের নতুন রেকর্ড করেছে তারা। একদিনে ৫ হাজার ১৯টি কন্টেইনার তারা ওঠানামার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এই খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করেছে ইউনূস সরকারের প্রেস উইং।
মজার ব্যাপার হলো, এই সংবাদের কোথাও পূর্বেকার কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড কত ছিল, তা সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আসুন হিসাব মেলানো যাক।
প্রথমত, কত কন্টেইনার দৈনিক ওঠানামা হচ্ছে, সে তথ্য প্রকাশ করার একমাত্র দায়িত্বশীল সংস্থা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ড্রাইডকের এমন রেকর্ডের দাবির বিপরীতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত নিশ্চুপ।
বন্দর সংশ্লিষ্টদের দাবি, চরম জালিয়াতি টের পেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ এই সংখ্যা নিয়ে নীরব অবস্থানে রয়েছে।
জানা থাকা জরুরি, চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংসহ যাবতীয় অপারেশনের হিসাব চলে দৈনিক হিসেবে। তাদের দিনের শুরু হয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে। তারিখ শুরু হয় প্রতিদিন রাত ১২.০১ মিনিট থেকে পরদিন রাত ১২.০০ পর্যন্ত অর্থাৎ বর্ষপঞ্জি অনুসারে। বিশ্বের সব দেশই এই নিয়ম অনুসরণ করে।
চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডও গত ৬ই জুলাই রাত ১২.০১ মিনিট সময় থেকে সাইফ পাওয়ার থেকে তাদের দায়িত্ব বুঝে নেয়। যদিও এখন পর্যন্ত বন্দরের সাথে এ নিয়ে তাদের কোনো চুক্তিনামা হয়নি, সবই চলছে মৌখিক নির্দেশে।
বন্দরের কম্পিউটার ডাটা সিস্টেম দিনপঞ্জি হিসেবে তৈরি। কম্পিউটারে দৈনিক কন্টেইনার ওঠানামার হিসেবও সেভাবে প্রতিনিয়ত আপডেট হয়। কোন জাহাজ থেকে কয়টি বক্স, কয়টি কন্টেইনার ওঠানো বা নামানো হলো, তা সাথে সাথে ডাটা সিস্টেমে উঠে যায়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত ডাটা বলছে, গত ২৮শে আগস্ট আমদানি ও রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২৪৪ টিইউস। ৫ হাজার ১৯ টিউস নয়। তাহলে প্রশ্ন হলো, ৫ হাজার ১৯ টিউস রেকর্ড কীভাবে ঢুকল এখানে? এখানেই আসলে চাতুরিটা করেছে ইউনূস সরকার ও ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ। তারা রাত ১২.০১ মিনিট থেকে সময় হিসেব না করে করেছে ২৮ তারিখ সকাল ৮টা থেকে ২৯শে আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত।
অর্থাৎ ডাটা সিস্টেমের হিসেবে না গিয়ে নিজেদের মনগড়া হিসেবে ২৪ ঘন্টার হিসেব করেছে। এই হিসেব বা রেকর্ডের কোনো মানদণ্ড এবং ভিত্তি নাই।
জানা কথা, বন্দরে সাধারণ রাতের শিফটে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং দিনের তুলনায় কম হয়। ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ দুদিন মিলিয়ে একদিনের রেকর্ড দাবি করেছে! যা একেবারেই বিভ্রান্তিকর। একদিনে যদি আদৌ রেকর্ড সংখ্যক কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ঘটনা ঘটত, তবে ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ নয়, খোদ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষই সাংবাদিক ডেকে সমগ্র জাতির কাছে তুলে ধরত সাফল্যের কথা। অতীতেও বিভিন্ন সময় চবক এটা করেছে।
তথ্য-উপাত্ত: অর্থনীতি ও রাজনীতি বিশ্লেষক জামিল হাসান