উপ-শিরোনাম: ইউনূস সরকারের বেপরোয়া অপপ্রয়াস ও সম্মানহানির ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার বোন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ ও তার প্রতিষ্ঠান সূচনা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলাকে ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেন, ‘ইউনূস সরকারের হাতের পুতুল’ দুদক এই মামলা দায়ের করেছে তার পরিবারের সম্মানহানি, সায়মা ওয়াজেদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে তাদের দূরে রাখার এক ‘অবিরাম ষড়যন্ত্রের’ অংশ হিসেবে।
সজীব ওয়াজেদ জয় তার বিবৃতিতে দুদকের আনা চারটি অভিযোগ খণ্ডন করেন। অভিযোগগুলো হলো:
১. সূচনা ফাউন্ডেশন একটি ‘কাগুজে’ প্রতিষ্ঠান।
২. সায়মা ওয়াজেদ ও সূচনা ফাউন্ডেশন অনুদানের নামে ঘুষ গ্রহণ করেছে।
৩. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ফাউন্ডেশনকে কর অব্যাহতি প্রদান ক্ষমতার অপব্যবহার।
৪. ফাউন্ডেশনের নামে সন্দেহজনক লেনদেন করা হয়েছে।
জয় বলেন, “এই অভিযোগগুলোর প্রকৃতিই বলে দেয় মামলাটির যোগ্যতা কতটুকু।” তিনি উল্লেখ করেন, সূচনা ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা অটিজম, নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার (এনডিডি) এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে। সায়মা ওয়াজেদ একজন বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, যিনি ২০০৯ সাল থেকে অটিজম নিয়ে কাজ করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তার বর্তমান ভূমিকার আগে তিনি সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে বাংলাদেশে অটিজম ও এনডিডি নিয়ে জাতীয় কৌশল এবং নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
দুদকের ‘ভৌত অবকাঠামো না থাকা’ সংক্রান্ত অভিযোগের জবাবে জয় বলেন, “দুদক এটা বলতে ভুলে গেছে যে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের পাশে অবস্থিত সূচনা ফাউন্ডেশনের অফিসে ২০২৪ সালের আগস্ট এবং ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউনূস-সমর্থিত উচ্ছৃঙ্খল জনতা সহিংস হামলা চালায়। অফিসটি ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের পর পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।”
অনুদান সংক্রান্ত অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে এবং একজন প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বকে সূচনা ফাউন্ডেশনের মতো একটি প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য ‘ঘুষ’ নিতে হবে, এটা ভাবাটাই হাস্যকর।” তিনি আরও বলেন, একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশি-বিদেশি অনুদান গ্রহণ করার সম্পূর্ণ আইনি অধিকার সূচনা ফাউন্ডেশনের রয়েছে।
কর অব্যাহতির বিষয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “গ্রামীণ ব্যাংকের মতো শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান যদি কর ছাড় পেতে পারে, তবে সমাজের সবচেয়ে অসহায় একটি অংশের জন্য নিবেদিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে কর ছাড় দেওয়া নিয়ে কেন প্রশ্ন উঠবে?”
সজীব ওয়াজেদ জয় অভিযোগ করেন, দুদক কোনো প্রমাণ ছাড়াই এই মামলা করেছে এবং ‘সন্দেহজনক লেনদেন’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে, তা স্পষ্ট করেনি। তিনি এটিকে ‘ইউনূসের ব্যক্তিগত নিপীড়নের playbook’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রকাশ করা, লোক দেখানো তদন্ত চালানো, অভিযুক্তদের সাথে কোনো যোগাযোগ না করেই মামলা দায়ের এবং অনুপস্থিতিতে একতরফা রায় দেওয়া—এটাই তাদের কৌশল।”
বিবৃতির শেষে তিনি বলেন, “অর্থনীতি থেকে শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা থেকে দারিদ্র্য—প্রতিটি খাতে ব্যর্থ হয়ে ইউনূস সরকার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমাদের বাড়ি-অফিস গুঁড়িয়ে দিয়ে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও শত শতকে হত্যা করেও তারা জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন পরিমাণ কমাতে পারেনি। দুদকের এই মামলাগুলো তাদের সেই হতাশারই বহিঃপ্রকাশ।”
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, “এসব করে কোনো লাভ হবে না। আমাদের ভয় দেখিয়ে চুপ করানো যাবে না।”