এক্টিভিস্ট পুষ্পিতা গুপ্তা লিখেছেন ২০০৪ সালে ক্যালেন্ডারে ‘২১আগস্ট’ ছিল না। এই ছোট্ট কথাটি অনেক বিশাল অর্থবোধক। সত্যি কি ২০০৪ সালের ক্যালেন্ডারে ’২১ আগস্ট’ ছিল না্। হয়তো হতে পারে। উত্তরটি আবু মকসুদের ভ্যানেটি ব্যগের ভেতর খুঁজতে পাঠক পড়ুন পুরোটা।
আবু মকসুদ
একুশে আগস্ট: এক ভ্যানিটি ব্যাগের গল্প
এমন রায়ের পর মনে হয়, আমাদের ইতিহাস বইগুলো নতুন করে লেখা দরকার। কারণ, আজকের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর স্পষ্ট হয়ে গেছে যে বাংলাদেশে কখনো একুশে আগস্ট নামে কোনো ঘটনা ঘটেনি। এত বছর আমরা যা দেখে এসেছি, যা শুনেছি, যা নিয়ে কেঁদেছি, সবই ছিল বিভ্রম। হয়তো আমাদের চোখে ধুলা ঢুকেছিল, বা হয়তো আমরা সবাই কোনো এক গণভ্রমে ভুগছিলাম।
আমার ব্যক্তিগত যন্ত্রণা এখানেই। গত ২১ বছরে আমি অন্তত ২১টি লেখা লিখেছি একুশে আগস্ট নিয়ে। প্রতিটি লেখায় ছিল উত্তাল আবেগ, ছিল অসীম ঘৃণা, এবং ছিল সেই দুঃসহ দিনের দগদগে স্মৃতি। আজকের রায় পড়ে বুঝলাম, আমি এতদিন একদম অকারণে ঘৃণা পুষে রেখেছি। একুশে আগস্ট তো ঘটেইনি, তাহলে আমি কাকে ঘৃণা করলাম? কত নিষ্পাপ মানুষকে আমি শয়তান ভেবে গালাগালি করেছি! তারেক রহমান এবং লুৎফুজ্জামান বাবর; এরা তো আসলে ফেরেশতা। আমার কলমের কালির প্রতিটি ফোঁটা তাদের প্রতি অন্যায় করেছে।
আজ আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, যেন তিনি আমার এই ভয়ঙ্কর অপরাধ ক্ষমা করেন। আমি ভুল বুঝেছি, ভুল দেখেছি। আমার চোখের সামনে যে রক্তাক্ত লাশগুলো ছিল, আসলে সেগুলো ছিল শয়তানের দেহ, যাদের আল্লাহ নিজ হাতে ধ্বংস করেছেন। আমাদের ভুল ধারণা হয়েছিল যে এগুলো ছিল মানুষ। এখন বুঝতে পারছি, রাস্তার সেই চিৎকার, সেই করুণ আর্তনাদ, সবই ছিল এক ধরণের জিনের কণ্ঠস্বর, মানুষের নয়।
এবং আজ থেকে আমি তারেক রহমান এবং বাবরকে শুধু মানুষ বলব না, আমি তাদের ফেরেশতার মর্যাদা দেব। তারা আল্লাহর পাঠানো নিরপরাধ দুটো শিশু, যাদের ওপর আমরা নোংরা অভিযোগ চাপিয়ে দিয়েছিলাম। তাদের নাম শুনলেই আমি আজ কেঁপে উঠি; কীভাবে এত বছর ধরে আমি তাদের শয়তান ভাবলাম!
এখন থেকে আমি শেখ হাসিনার দিকেও নতুন চোখে তাকাব। রায়ের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো, তিনি নিজেই তার ভ্যানিটি ব্যাগে বোমা লুকিয়ে রেখেছিলেন। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, নিজে নিজেকে মারতে চেয়ে পরে দোষ চাপাবেন তারেক এবং বাবরের ওপর। কিন্তু আল্লাহ তো সব দেখেন। শেষ পর্যন্ত তিনি শেখ হাসিনাকে এমনভাবে শাস্তি দিয়েছেন যে এক কাপড়ে তাকে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে।
ভবিষ্যতের জন্যও সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকা উচিত। যদি কখনো সরকার পরিবর্তন হয় এবং কেউ আবার একুশে আগস্টের কথা তোলে, তাহলে সেই ব্যক্তিকেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। কারণ, যেটা ঘটেনি, সেটা ঘটেছে বলার সাহস দেখানোই তো সবচেয়ে বড় অপরাধ। ইতিহাসের পাতা থেকে একুশে আগস্টকে স্থায়ীভাবে মুছে ফেলার জন্য আজকের রায়ই যথেষ্ট।
এখন আমার ভেতরে তীব্র অনুশোচনা। আমার কলমের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য, যেন বিষাক্ত তীর হয়ে আঘাত করেছে নিরপরাধ তারেক এবং বাবরের হৃদয়ে। আমি তাদের প্রতি যতটা দোষারোপ করেছি, ততটাই আমি শেখ হাসিনাকে দেবতা বানিয়ে পূজা করেছি। অথচ তিনি আসলে সেই ভ্যানিটি ব্যাগের বোমা বয়ে বেড়ানো ষড়যন্ত্রকারী।
আমাদেরও উচিত, তারেক এবং বাবরের নাম শোনামাত্র মাথা নত করা। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতিও আমার দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। আমি এতদিন তার এতিম পুত্রকে শয়তানের সন্তান ভেবেছি। আজ বুঝতে পারছি, তিনি ছিলেন আল্লাহর পাঠানো এক অমূল্য দান, আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
আজকের রায় আমাদের জন্য আল্লাহর এক বিশেষ রহমত। তিনি সত্যকে উন্মোচন করেছেন, মিথ্যাকে ধ্বংস করেছেন। আমাদের চোখের আঁধার কেটে গেছে। আর যদি কেউ আজও একুশে আগস্টের নাম মুখে আনে, তবে বুঝতে হবে সে শয়তানের পক্ষের লোক। তারেক এবং বাবরের নামের পাশে সন্দেহের বিন্দুমাত্র ছায়া পড়তে দেওয়া যাবে না।
আমি প্রতিজ্ঞা করছি, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই দুই ফেরেশতার প্রতি আমি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করব। এবং আমার আগের সব লেখা আমি নিজের হাতে পুড়িয়ে ফেলব। সেই আগুনের ধোঁয়া হয়তো আমার পাপ ধুয়ে দেবে।
ধন্যবাদ আল্লাহ, ধন্যবাদ সুপ্রিম কোর্ট, আমাদের অন্ধ চোখ থেকে পর্দা সরানোর জন্য। আজ আমরা জেনেছি, বাংলাদেশে একুশে আগস্ট বলে কোনো দিন কিছু ঘটেনি। যা ঘটেছিল, তা ছিল আল্লাহর পরিকল্পনা, মানুষের কাজ নয়। সত্যের জয় হোক, ফেরেশতাদের জয় হোক, তারেক এবং বাবরের জয় হোক।