৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ইউরোপ ও বিশ্বের নাগরিক সমাজের সদস্যরা, যারা দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বাংলাদেশে গত ২৯ আগস্ট সাবেক মন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না এবং মঞ্চ ৭১ প্ল্যাটফর্মের আয়োজিত শান্তিপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য ব্যক্তিদের উপর মব সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরাম (বেলজিয়াম), ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইইউ ও গ্রেট ব্রিটেন), ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ ইন জার্মানি, আর্থ সিভিলাইজেশন নেটওয়ার্ক (তুরস্ক), এবং ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে বাংলাদেশে সংঘটিত সুপরিকল্পিত মব সন্ত্রাস, গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশ, নাগরিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক সম্প্রীতির জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি অডিটোরিয়ামে মঞ্চ ৭১ প্ল্যাটফর্মের আয়োজিত একটি শান্তিপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা হামলা চালায়। এই হামলায় বয়োজ্যেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাসহ অংশগ্রহণকারীদের উপর মৌখিকভাবে আক্রমণ ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। বিস্ময়করভাবে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয় এবং প্রকৃত অপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে ১৬ জন অংশগ্রহণকারীকে গ্রেপ্তার করে।
৩০ আগস্ট, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে জামিন অস্বীকার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এই ঘটনাগুলোকে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো আইনের প্রক্রিয়ার সুস্পষ্ট অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নির্যাতন হিসেবে অভিহিত করেছে। এই ধারাবাহিক ঘটনা—মব সহিংসতা, ভুক্তভোগীদের লক্ষ্যবস্তু করা, মিথ্যা অভিযোগ এবং জামিন অস্বীকার—আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের (আইসিসিপিআর) ৯ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন, যা নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক নিষিদ্ধ করে এবং সকল ব্যক্তির স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করে।
আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর অবস্থান
চিঠিতে জোর দেওয়া হয়েছে যে:
১. প্রত্যেক নাগরিকের ভয়মুক্তভাবে কথা বলার, সমাবেশ করার এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।
২. জনতার হামলা, হয়রানি এবং রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা গণতন্ত্রে অগ্রহণযোগ্য।
৩. কর্তৃপক্ষকে অপরাধীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা, ন্যায়বিচার এবং তাদের উপর সংঘটিত অন্যায়ের প্রকাশ্য স্বীকৃতি প্রাপ্য।
দাবি ও আহ্বান
সংগঠনগুলো বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিম্নলিখিত দাবি জানিয়েছে:
১. অন্যায়ভাবে আটক সকল ব্যক্তিকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া।
২. সহিংসতার আয়োজক ও বাস্তবায়নকারীদের বিচারের আওতায় আনা।
৩. গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগকারী সকল নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
৪. আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা পুরোপুরি পালন করা।
চিঠিতে সতর্ক করা হয়েছে যে, নিষ্ক্রিয়তা কেবল অন্যায়কে চিরস্থায়ী করবে না, বরং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ভিত্তিকেও দুর্বল করবে। সত্যিকারের গণতন্ত্র সেখানে টিকে থাকতে পারে না যেখানে ভয়, সহিংসতা এবং হয়রানি সহ্য করা হয়। সংগঠনগুলো এই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতিটি ব্যক্তির মর্যাদা, অধিকার এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অবিলম্বে কংক্রিট পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন পাওলো কাসাকা, সাবেক ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য এবং সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক। এই ঘটনা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগকে আরও তীব্র করেছে।