হিমালয়ান টাইমসের এক প্রতিবেদনে সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে যে, ‘জেন-জি’ এর তরুণরা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছেন। আজকের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে। আলোচনায় কুল মান ঘিচিংও।
নেপালে চলমান তীব্র বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর দেশটিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভকারী তরুণরা প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।
তরুণদের সঙ্গে এই বৈঠকের আগে সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল এবং সুশীলা কারকির ঘনিষ্ঠদের মধ্যে একটি পৃথক বৈঠক হতে পারে। যদি সেই আলোচনা ইতিবাচক হয়, তাহলে পরবর্তী বৈঠক প্রেসিডেন্টের দপ্তর শীতল নিবাসে অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে নেপালি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল যে, কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ ওরফে বালেনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় বিক্ষোভকারী তরুণরা, যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছিল। তবে বালেন শাহ নিজেই সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন। এএফপিকে তিনি বলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা।
এএফপি জানিয়েছে যে, বুধবার সেনাপ্রধান গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং ‘জেন-জি’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকা রক্ষা বাম নামে একজন তরুণ জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে সুশীলা কারকির নাম এসেছে এবং তারা এখন প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছেন। ৭৩ বছর বয়সী সুশীলা কারকি একজন শিক্ষাবিদ এবং নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি।
এএফপিকে তিনি বলেছেন যে, ‘সংসদ এখনো টিকে আছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের একত্রিত হয়ে সমাধানের একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে।’ নেপালের সংবিধান অনুযায়ী, এমন অবস্থায় প্রেসিডেন্টের নির্দেশে সংসদের নেতাদের মধ্য থেকে সরকার গঠনের কথা, কিন্তু এই নেতাদের অনেকেই বর্তমানে পলাতক।
এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার নেপালি সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল এবং ‘জেন-জি’ যুব প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
সুশীলা কারকি কে?
সুশীলা কারকি নেপালের প্রথম এবং একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে পরিচিত। ৭৩ বছর বয়সী কারকি সৎ এবং নির্ভীক বিচারক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। কাঠমান্ডু সিটি মেয়র বালেন্দ্র শাহও সুশীলা কারকির নাম সমর্থন করেছেন। তবে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি ছোট অংশ তাঁর বিরোধিতা করছে। তাদের যুক্তি, নেপালের সংবিধান অনুযায়ী সাবেক বিচারকদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনুমতি নেই এবং কারকির বয়স বেশি।
কুল মান ঘিসিংয়ের নামও আলোচনায়
সুশীলা কারকি ছাড়াও নেপালের বিদ্যুৎসংকট সমাধানকারী প্রকৌশলী কুল মান ঘিসিংয়ের নামও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে আলোচনায় এসেছে। তাঁকে ‘দেশপ্রেমিক এবং সবার প্রিয়’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। কিন্তু গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের প্রথম পছন্দ ছিলেন মেয়র বালেন্দ্র শাহ, তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় কুল মান ঘিসিং এবং সুশীলা কারকির নাম উঠে আসে।
এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো এখনো অস্পষ্ট। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আজকের বৈঠক এই সংকট সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে পারে।