পাল্টা সমাবেশেও হাজার হাজার জনতা
মধ্য লন্ডনে গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ছিল ঘটনাবহুল। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন অতিদক্ষিণপন্থী নেতা টমি রবিনসন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জমায়েতও হয়েছিল প্রচুর। ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষ ইউনিয়ন জ্যাক হাতে লন্ডনে জড়ো হয়েছিলেন৷ তাঁদের মুখে উদ্বাস্তু, বামপন্থী এবং প্যালেস্টাইন বিরোধী স্লোগান। ইলন মাস্ক বক্তৃতা করেছেন অনলাইনে। বলেছেন, বামপন্থীরা হলেন ‘খুনিদের দল’। হোয়াইট ভ্যানগার্ড, প্যাট্রিয়টিক অল্টারনেটিভের মতো কট্টর বর্ণবাদী, ফ্যাসিস্ট সংগঠনগুলি প্রকাশ্যে তাদের পতাকা নিয়ে অংশ নিয়েছে মিছিলে।
টমি রবিনসন দাবি করেছেন মিছিলে লক্ষাধিক জমায়েত হয়েছে। সংখ্যা যাই হোক, সাম্প্রতিক অতীতে এটাই লন্ডনে ফ্যাসিস্টদের সবচেয়ে বড় জমায়েত। এর আগেও টমি রবিনসন মিছিল করেছেন, কিন্তু এত লোক হয়নি। আজকের মিছিল দেখে মনে পড়ছিল অসওয়াল্ড মোসলের ব্রিটিশ ইউনিয়ন অফ ফ্যাসিস্টের কথা। যাদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করেছিলেন ফ্যাসিবিরোধীরা। ব্যাটল অফ কেবল স্ট্রিট।
অতিদক্ষিণপন্থার পক্ষে, উদ্বাস্তুদের বিরুদ্ধে লন্ডনে এমন জমায়েত অপ্রত্যাশিত কিছু নয়৷ ব্রিটেনে অতিদক্ষিণপন্থী ঝড় শুরু হয়েছে। বিপুল ভোট পাচ্ছে উদ্বাস্তু বিরোধী, অভিবাসী বিদ্বেষী অতিডানপন্থী রিফর্ম পার্টি৷ সাবেকি ধাঁচের দক্ষিণপন্থী কনজার্ভেটিভ পার্টি সুবিধা করতে পারছে না৷ তাদের জনভিত্তি সরে যাচ্ছে রিফর্মের দিকে৷ বেগতিক বুঝে তারাও কথা বলছে অতিদক্ষিণপন্থার ভাষায়৷ সরকারি দল লেবার পার্টির অবস্থাও তথৈবচ।
অতিডানপন্থার উত্তর বামপন্থাই৷ রিফর্ম পার্টির জোয়ারের প্রতিক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটেনে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন বামপন্থীরাও৷ দুই সাংসদ জেরেমি করবিন এবং জারা সুলতানার নেতৃত্বে গড়ে উঠছে নতুন বামপন্থী দল। দলের নাম এখনও স্থির হয়নি৷ ইওর পার্টি নামে কাজ শুরু হয়েছে৷ বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় সভা করছেন নতুন দলের উদ্যোক্তারা। সেখানে ভিড় উপচে পড়ছে৷ বিভিন্ন মতের কমিউনিস্টরাও নতুন দলকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগী৷ এমন বেশ কয়েকটি সভায় উপস্থিত থেকে মানুষের উৎসাহ, উদ্দীপনা নিজের চোখে দেখলাম৷ তবে ভোটের রাজনীতির লড়াই অনেক কঠিন৷ সেখানে ভালো কিছু করতে হলে প্রয়োজন শক্ত পরিকাঠামো। জেরেমি, জারা সুলতানা এবং তাঁদের সহযোদ্ধারা কি তেমন কিছু গড়ে তুলতে পারবেন? উত্তর পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
টমি রবিনসনের মিছিলের পাল্টা জমায়েতও ছিল আজ লন্ডনে। অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট মিছিল। সেখানেও জমায়েত ছিল প্রায় ২০ হাজার৷ মিছিলের একদম সামনে নারীরা৷ তাঁরাই মিছিলের নেতৃত্বে৷ তাঁদের পিছনে কমিউনিস্ট, সোস্যালিস্ট, অ্যানার্কিস্ট, প্যালেস্টাইনপন্থীরা। তাঁদের পিছনে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের হাজার হাজার সদস্য। উদ্বাস্তুদের পক্ষে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এই মিছিলে হাঁটলেন জারা সুলতানাও৷
হোয়াইটহলের কাছে মুখোমুখি দাঁড়াল দুটি মিছিল৷ মাঝখানে পুলিশের ব্যারিকেড৷ প্রবল উত্তেজনা। গালিগালাজ৷ বিক্ষিপ্ত হাতাহাতি। বোতল নিয়ে মারামারি৷ শহরের অন্যত্রও টমি রবিনসনের লোকজনের সঙ্গে ফ্যাসিবিরোধী মিছিলে আসা জনতার সংঘর্ষ। রক্তারক্তি। সব মিলিয়ে ঘটনাবহুল দিন। সঙ্গের ছবিতে মুখোমুখি দুই পক্ষ।
সম্ভবত এই সংঘাত আগামীতে আরও বাড়বে। আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যাবে ব্রিটেন৷ কুসুম কুসুম মধ্যপন্থা অধিকাংশ জায়গাতেই কবরে শুয়ে পড়ছে, বা শীতঘুমে যাচ্ছে। মৃত সাম্রাজ্যের রাজধানীই বা ব্যতিক্রম হবে কেন?