একদা এই ভারতভূমিতে একজন শিক্ষক ছিলেন। তক্ষশীলাতে রাজনীতিশাস্ত্র পড়াতেন। কোনও একদিন তাঁর হঠাৎ নিজের জন্মস্থানে কথা মনে পড়ে গেল। সেই সুদূর মগধে। তিনি মগধে ফিরে এসে সেখানকার শাসকের সঙ্গে দেখা করলেন। শাসক নিজেকে সদাই শক্তিশালী ভাবেন। সেই শিক্ষক তাঁকে রাজ্যের সুরক্ষা সম্পর্কিত গুটিকয় প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সামান্য এক শিক্ষকের দুঃসাহস দেখো, শাসকের মনে তখন ক্রোধের ঝলকানি দেখা দিল। রুষ্ট শাসক সেই শিক্ষককে চূড়ান্ত অপমানিত করে তাড়িয়ে দিলেন। সেই শিক্ষক, সেদিনের সেই বিতাড়িত ক্ষুব্ধ আচার্য নিজের শিখা বন্ধন করে পণ নিয়েছিলেন, শাসককে সিংহাসন থেকে না নামানো পর্যন্ত তাঁর মন শান্ত হবে না। হাতেগোনা কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির গূঢ়বিদ্যা শেখালেন, রাজনীতির মারপ্যাঁচ শেখালেন, আর শেখালেন কূটনীতি। সেই বিদ্যা লাভ করে ছাত্ররাই গুরুর জন্য মগধের শাসককে ধূলিধূসরিত করে তুলল। বিশ্বের প্রথম রক্তহীন ক্রান্তি জন্ম নিল। নির্বল শিক্ষককে তুচ্ছ জ্ঞান করা শাসক টের পেলেন বুদ্ধির মতো বল নাই। কালক্রমে সেই শিক্ষক এমন এক মহাগ্রন্থ রচনা করলেন, যা শাসককুলের আচার-সংহিতা হয়ে উঠল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেই বই রাজারাজড়াদের পথ-প্রদর্শক হল। আজও সেই বইয়ের প্রতিটা শ্লোক সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। সেই কালজয়ী শিক্ষকের ‘অর্থশাস্ত্র’ আজও নমস্য। আজও তাঁর গুপ্তচরী বিদ্যা দেশকে সুরক্ষিত রেখেছে। আজও তাঁর কূটনীতি অম্লান। তিনি আচার্য বিষ্ণুগুপ্ত, তিনি চাণক্য, তিনিই কৌটিল্য।
‘শয়তান, সাবধান!’ শিক্ষকের শক্তিকে কম ভেবো না। সেদিন যে ভুল মগধের শাসক ধননন্দ করেছিলেন, তুমি আজ কোরো না।