।। মনজুরুল হক।।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মোড়ল আমেরিকা কোনও কিছু চাইবে, আর দরিদ্র দেশ দেবে না, তা তো হয় না। তার উপর আমেরিকা যদি ডিপস্টেট কনসপিরেসি করে অযোগ্য, গণবিচ্ছিন্ন এক ন্যায়-নীতিহীন উচ্চাভিলাসী মাইক্রোক্রেডিট বিজনেসম্যানকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়ে দেয় তাহলে তাদের নির্দেশে উঠতে হবে, বসতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটবে না। ১০ সেপ্টেম্বর ইউএস-বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে অবতরণ করেন মার্কিন সেনাবাহিনী এবং মার্কিন বিমান বাহিনীর প্রায় ১২০ জন কর্মকর্তা। সেইসঙ্গে দুটো হারকিউলিস পরিবহন বিমানে প্রচুর যন্ত্রপাতিও এসেছে। সরকারি ভাষ্য- ‘প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল মহড়ার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এগিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ। ‘
প্রশ্ন হলো এত ঘন ঘন আমেরিকান সৈন্য বাংলাদেশে কেন আসছে? উত্তরের জন্য ধারাবাহিক সময় খেয়াল করতে হবে। শেখ হাসিনার বিদায়, সেনাপ্রধানের জাতির দায়িত্ব নেওয়া, ড. ইউনূসের ক্ষমতাগ্রহণ সবকিছুই প্ল্যানমাফিক ছিল। ব্যাপারটা সেই ব্রিটিশ আমলের মত। আগে কংগ্রেস পার্টি গড়ে ওঠে, তার পর হঠাৎ করেই গান্ধী সাউথ আফ্রিকা থেকে এসে ক্ষমতায়। হাসিনা ভারতে পৌঁছেই জানিয়ে দেন-‘সবটা হয়েছে আমেরিকার পরিকল্পনায়। তাদের মূল উদ্দেশ্য একটা বড় সামরিক ঘাঁটি তৈরি হবে আমেরিকার জন্য।‘ এর প্রমাণ মেলে পরের মাসে ১৪ সেপ্টেম্বর আমেরিকার প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে এবং ইউনূসকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য দিয়ে চলে যায়। টাকা পেয়েই ইউনূস পরের মাসে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জনসাধারণের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। খেলার শুরু এখান থেকেই।
আমেরিকার টার্গেট ভারত-চীন। তা না হলে বাংলাদেশে এমন কোনও রিসোর্স নেই যা নিয়ে তারা লাভবান হতে পারে। আমেরিকার ইতিহাস বলে তারা যে দেশে সৈন্যসমেত ঢুকেছে, হয় সেই দেশটি খণ্ড-বিখণ্ড হয়েছে, নয়ত একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী দেশটাকে নরক বানিয়েছে। এখানে আমেরিকার উপস্থিতি যে ভারত এবং চীনকে কাবু করে ইন্দোপ্যাসিফিক জোনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার। এবছর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাগাতার বাংলাদেশে আমেকিার সেনা প্রতিনিধিরা আসছে-যাচ্ছে। কখনও ট্রেনিংয়ের নামে, কখনও দ্বিপাক্ষিক মত বিনিময়ের ছুঁতোয়, কখনওবা সিলেটের জঙ্গলে গ্রীষ্মকালিন মহড়ার নামে। জ্যাকবসনের চট্টগ্রাম বন্দর রেকি করা, কক্সবাজারের শিলখালিতে ‘মানবিক’ করিডোর, কক্সবাজার সেনা ক্যাম্পে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে গত কয়েক মাসে আমেরিকার সৈন্য নিয়মিত আসছে। মে মাসে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার পরিদর্শনের দুদিন পরেই আমেরিকার চারজন ওয়ার এক্সপার্ট ঢাকায় এসে সেনা দফতরে মিটিং করে।
কাকতালীয়ভাবে যেদিন আমেরিকার ওয়ার এক্সপার্টরা চট্টগ্রাম রেকি করে গেল, তার দুদিন পরে এলো চারজন ইন্টেলিজেন্সের লোক। ঠিক সেই সময়ে ড. ইউনূসও চট্টগ্রাম গিয়ে বন্দর আধুনিকায়নের নামে ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে লিজ দিল। এখন ওপেনলি চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানি অপারেট করছে। যার খেসারতে ৪৭% বাড়তি ট্যারিফও বলবত হয়েছে ইউজারদের ওপর।
এরই মধ্যে ভারত-চীন বিপদের গন্ধ পেয়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে কিছু ইনপুট দেয়। সে কারণে তিনি ঘোষণা করেন-‘নো ব্লাডি করিডোর, নো লিজ অন চিটাগং পোর্ট’। তিনি সে সময় স্পষ্টভাবেই বলেছিলেন―’এসব আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি’। এতে করে মাস দুয়েক ধরে সেনাপ্রধান-ইউনূসের টানাপোড়েন চলে।
প্রায় ১৬ বছর পরে ২৪ জুলাই বাংলাদেশ-আমেরিকা যৌথ মহড়া হয়, যা হাসিনার আমলে হতে পারেনি। এর মধ্যে মার্কিন স্পেশাল ফোর্স বাংলাদেশের সেনাদের গেরিলা অপারেশনের কাউন্টার অপারেশন, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধকৌশলসহ স্পেশাল ওয়ার স্ট্রাটিজির ট্রেনিং দেয়। ৩০ জুলাই মহড়া শেষ হওয়ার পরও আমেরিকার সকল সৈনিক দেশ ছাড়েনি। তার প্রমাণ মেলে আগস্ট মাসে এক অত্যাশ্চর্য ঘটনায়। ওই মাসের ৩১ তারিখে মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের এক কমান্ডো ট্যারেন জ্যাকসন-এর মৃত্যু হয় বাংলাদেশে হোটেলে। যিনি ‘ব্যবসায়ী’ পরিচয়ে হোটেলে থাকতেন। ধারণা করা হয় তিনি সেনাদের ট্রেনিং দিতেন। তাই যদি হয় তাহলে তাকে কে মে*রে দিল? অনুমান করা যায় তৃতীয় কোনও পক্ষ, অর্থাৎ ভারত-চীন-রাশিয়া হয়ত এই ঘটনায় ‘ইন’ করেছিল। অথবা এমনও হতে পারে মার্কিনীরাই স্পাইথিওরীতে মে*রে দিয়েছে যেন ইনফো লিক না হয়। এই সন্দেহ দানা বাঁধে বাংলাদেশের সেনা, ইন্টেলিজেন্স ও পুলিশকে তদন্ত করতে আমেরিকা মানা করে দেয়। অর্থাৎ পোস্টমর্টেম ছাড়াই লাশ আমেরিকা চলে যায়।