বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১১২.১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। মাত্র ছয় মাসে এই ঋণ বেড়েছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি দেশের জন্য এক গুরুতর সতর্ক সংকেত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ১০৪.৮ বিলিয়ন ডলার। মাত্র তিন মাসে ঋণ বেড়েছে আরও ৭৩৬ কোটি ডলার।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও ঋণনির্ভরতা কমার বদলে বেড়েই চলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ের অদক্ষতা, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওপর অতিরিক্ত চাপ এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। ফলে বৈদেশিক আয়ের তুলনায় ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধের চাপ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সতর্ক করে বলেন, জিডিপি অনুপাতে ঋণ এখনো সহনীয় হলেও পরিশোধে যে চাপ তৈরি হচ্ছে তা বিপজ্জনক। তার ভাষায়, “ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহার না হলে আগামী দিনে এর বোঝা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।”
তথ্য বলছে, বৈদেশিক ঋণের ৮২ শতাংশ সরকারি খাতে, আর বাকি ১৮ শতাংশ বেসরকারি খাতে। জুন শেষে সরকারি খাতের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৩৭ কোটি ডলার—মাত্র তিন মাসে যা বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। বিপরীতে বেসরকারি খাতের ঋণে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের হিসাবে, মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ এখন দাঁড়িয়েছে ৬৩৮ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৭ হাজার ৪৩৩ টাকা। দশ বছর আগে এই ঋণ ছিল মাত্র ২৫৭ ডলার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ঋণ বাড়ার ধারা থামানো না গেলে দেশ ঋণের ফাঁদে পড়তে বাধ্য।