
“নিজেদের গৌরবকে অস্বীকার করে সুন্দর আগামী গড়া যায় না।” আমাদের সমগ্র জাতির এক অনন্য গৌরব গাঁথা একাত্তরের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।তার আগে মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারী।
এর আগে প্রায় দুইশ’ বছর বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই।
তার আগে মোগলদের,সেন বংশ,পাল বংশের শাসন ইত্যাদি নানা ধরনের অভিজ্ঞতা।
কিন্তু ,আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট খ্রীস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে প্রায় সারা ভারত বর্ষ জয়ের পর কোথা থেকে ফিরে গিয়েছিল ,তোমরা জানো কি?
জায়গাটির নাম ‘গঙ্গাঋদ্ধি’-যা আজকের দিনের উয়ারী বটেশ্বর,নাটেশ্বর বা আমাদের সমগ্র বাংলাদেশ। উইকিপিডিয়া বা গুগলে ‘Ganga Ridai’ লিখে সার্চ দিলে জানবে ঐ আমলে আমাদের এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও সৌরভের কথা।
জানবে রোমাঞ্চকর সব কাহিনী আর
দেশ-বিদেশের ইতিহাসবিদদের শত শত রেফারেন্স।
ওরা ফিরে গেছে শুধুমাত্র হাতি,ঘোড়া ও পদাতিক বাহিনীর ভয়ে নয়।এই অঞ্চলে তখনই ছিল ধর্ম চর্চা, শিক্ষা ও নতুন গড়ে ওঠা সভ্যতা।সে কারণেই ক্লান্ত আলেক্সান্ডার বাহিনী এখান থেকে পশ্চাদপসরণ করেছিল।
এই বাংলা আগা গোড়াই ছিল সম্পদশালী।সম্পদ হীন হলে দূর-দূরান্ত থেকেব ওলন্দাজ বা ডাচ, পর্তুগীজ ও বৃটিশরা এখানে ছুটে আসতো না।আমাদের পলিমাটির উর্বরতা, মসল্লা,পাট,নীল, চা, খাদ্যশষ্য ওদেরকে আকর্ষণ করতো।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে পর্তুগীজরা সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণ করে নিয়ে যেত সন্দীপ ও পালাম বন্দর থেকে।
সুপরিকল্পিত ভাবে বৃটিশরা আমাদের এই সমৃদ্ধি ও সভ্যতার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে গেছে।চাপিয়ে দিয়ে গেছে দাসত্বের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শাসন ব্যবস্থা।
বৃটিশ আমলেই প্রচলিত প্রবাদ ছিল “What Bengal thinks today, rest of India thinks it day after”. এবং শিক্ষা-দীক্ষা,জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে তা বার বার সত্য প্রমাণিত হয়েছে।সারা বিশ্ব জেনেছে উদ্ভিদের প্রাণ আছে- জগদীশ চন্দ্র বোসের কাছ থেকে, ভারতের প্রথম নোবেল পুরস্কার বাংলার। আরো বহু উদাহরন আছে।
কাজেই কোন হীনমন্যতা নয় বরং ‘চির উন্নত মম শির’ অনুভূতি নিয়ে,গৌরবের মুগ্ধতা নিয়ে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে।
আমরা সৌভাগ্যবান, আমরা আমাদের তারুণ্যে মায়ের ডাকে সারা দিতে পেরেছিলাম।জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।
এই যুদ্ধ, এই স্বাধীনতা কখনও পুরানো হবে না। একে কেউ মুছেও ফেলতে পারবে না।
এর বিশালতা ,ব্যাপকতা,আত্মদান,সাহস,বীরত্ব নিয়ত তোমাদের অনুপ্রাণিত করবে।তোমরা মুক্তিযুদ্ধের বই পড়।প্রকৃত সত্যকে জান।এর ভয়াবহতা জান।সুফিয়া কামাল, সেলিনা হোসেন, শওকত ওসমান,আবুল ফজল,জাহানারা ইমামের লেখা ঐ সব দিনগুলির দিনলিপি পড়।পাকিস্তানি জেনারেল হামিদ রাজার ‘স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি’ বইটি পড়।’অপারেশন সার্চ লাইট’কি ছিল সেখান থেকে জানো।সেখানেই দেখতে পাবে এই অপারেশন নোটে ইয়াহিয়া খান লিখেছিল ” Kill 3 million bastard bagalees, rest will feed in my palm”. সেই দিনগুলো জানার জন্য পড় ‘Blood Telegram’-সেই সময়ে ঢাকাস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কন্স্যুলার জেনারেল আর্চার ব্লাডের পাঠানো টেলিগ্রামের কপি।তাদের আত্মসমর্পণের সময়ের সব কিছু জানো পাকিস্তানি মেজর সেলিম সাদিকের “Witness to surrender”বই থেকে।পড় নীলিমা ইব্রাহিমের লেখা “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বইটি।পড় তোমাদের মত তরুনেরা কি লিখেছিল “একাত্তরের চিঠি”তে।
এর প্রায় সবগুলো বই তুমি পাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অথবা অনলাইনে , <www.bookmuseum1971.com>
একবার কয়েক বন্ধু মিলে চলে যাও খুলনার চুকনগরে-যেখানে মাত্র পাঁচ ঘন্টায় ন্যূনপক্ষে ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
হে তরুন সমাজ, তোমরা আমাদের চেয়েও সৌভাগ্যবান। আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম।
তোমরা সেই স্বাধীন দেশে গণ অভ্যুত্থান উত্তর এক উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছ।
তোমরা এমন এক সময় তরুন,যখন বিশ্বব্যাপী চলছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব।প্রযুক্তিমুখী শিক্ষা আর প্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্প-অর্থনীতি দিয়ে বদলে যাচ্ছে পৃথিবী।
বাংলাদেশ তারুণ্যের দেশ।মোট জনসংখ্যার ৬৬শতাংশ ২৮ বছরের নীচে।এসব দেশই Demographic Dividend-এর সুযোগ পায়। আমরা পাবো কি?
অতীতকে মুছে দিয়ে নয়, মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করে নয় বরং মুক্তিযুদ্ধের পতাকা হাতে নিয়ে তোমরাই যদি দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাও, তোমরা গড়ে তুলবে উজ্জ্বল বর্তমান, উজ্জ্বলতর ভবিষ্যৎ।
হে তারুণ্য,তোমরাই ছিনিয়ে আনো সেই বিজয়!
যেমন আমরা এনেছিলাম স্বাধীনতা!!
তোমাদের হাতে তুলে দিলাম এই পতাকা……
জয় বাংলা !!!