বরগুনার আমতলীতে এক মাদরাসায় খাবারের আয়োজন হয়েছিল মাত্র ৫০ জন মানুষের জন্য — শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির কিছু সদস্য। একেবারে সাধারণ, নিরীহ, ঘরোয়া আয়োজন। তাতেও শান্তি নেই। কারণ দেশে এমন একটা দল আছে, যাদের কাছে মাদরাসা মানেই রাজনীতি, খাবার মানেই দখল, আর দাওয়াত না পেলেই সেটা তাদের চোখে রাষ্ট্রদ্রোহ। ওই দলের নাম বিএনপি। এই দল শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ না, সামাজিকভাবে বেপরোয়া, সাংস্কৃতিকভাবে বর্বর এবং নৈতিকভাবে দেউলিয়া। বরাবরের মতোই, তারা তাদের অস্তিত্ব জাহির করতে গিয়েও দেখিয়ে দিলো, তারা কতটা নিচে নামতে পারে।
খাবার নিয়ে রাজনীতি — এটা নতুন কিছু না বিএনপির জন্য। যারা নিজেরাই একসময় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হরতালের নামে পুড়িয়ে মানুষ মারাকে রাজনৈতিক কৌশল বলে চালিয়েছে, তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভদ্র কিছু আশা করাটাই বোকামি। গুলিশাখালীর সেই ছোট্ট মাদরাসার দুপুরের ভাতও তাদের সহ্য হয়নি, কারণ সেখানে তাদের ওয়ার্ড নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। ব্যস, এটাই অপরাধ। দল বেঁধে চড়াও হলো, মাদরাসায় ঢুকে গেলো, যেটুকু খাবার ছিল গোগ্রাসে গিলল, আর যেটুকু খাওয়া গেল না—তা নষ্ট করে গেলো। যেন এটাও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটা রাজনৈতিক কর্মসূচি! যেন খাবার খাওয়াটাই তাদের প্রতিবাদ। এ এক অদ্ভুত প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা—দাওয়াত না দিলে খাবার খাব, আর শুধু খাবই না, বাকিটাও নষ্ট করব। এ যেন রাজনীতির নামে রেঁধে খাওয়া লুটপাটের সংস্কৃতি।
বিএনপির এই চরিত্র নতুন না। তারা যেখানে যায়, বিশৃঙ্খলা নিয়ে যায়। তারা ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল, আর ক্ষমতার বাইরে এসে জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিতে চায়। তারা ক্ষমতায় থাকতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে পকেটে পুরেছিল, এখন তা না পেরে গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে মাদরাসার রান্নাঘর দখল করে ফেলছে। এটা একধরনের ক্ষমতার হ্যালুসিনেশন, যেখানে বাস্তবে তাদের কিছুই নেই, কিন্তু মস্তিষ্কে এখনো তারা বিরাট কিছু। এই মানসিক অসুস্থতা থেকেই তারা মাদরাসার খাবার খেয়ে সেটাকে ‘পিকনিকের স্মৃতি’ বলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। বিএনপির নেতাদের কাছে পিকনিক মানে অন্যের দাওয়াত ছাড়াই গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে খাওয়া, নষ্ট করা আর পরে সেই নোংরামির ওপর দাঁত বের করে হাসা।
এই দলটা শুধুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তি না — এটা একটা সামাজিক ব্যাধি। বিএনপি মানেই শুধু ক্ষমতা হারানোর কষ্টে লাল হয়ে থাকা একদল মানুষ না, তারা হলো এমন একদল রাজনৈতিক মরুভূমির যাত্রী, যাদের মেধা শূন্য, নীতি শূন্য, আর দায়িত্ববোধ তো দূরের কথা—সাধারণ সৌজন্যবোধটুকুও নেই। তারা ধর্মকে ব্যবহার করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে, দেশের গরিব মানুষের ঘাম ঝরানো অর্থনীতিকে ব্যবহার করে—শুধু নিজেদের ব্যর্থ রাজনীতিকে কৃত্রিম প্রাণ দেওয়ার জন্য।
এই ঘটনার মধ্যে লুকিয়ে আছে একটা প্রতীক। মাদরাসার সেই ভাঙা গেট, খালি পাতিল আর বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা, সব যেন বলছে—এই দেশে এখনো এমন একদল আছে, যারা খাবারের টেবিলেও রাজনীতি খোঁজে, যারা ভাতের পাতেও প্রতিশোধ খোঁজে। বিএনপি হচ্ছে সেই মানসিকতার নাম—যেখানে উন্নয়ন মানে বিদেশি ষড়যন্ত্র, সরকার মানে জালিম, রাষ্ট্র মানে দখলের জায়গা, আর সাধারণ মানুষ মানে শুধু ভোগের বস্তু।
এই দল ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে ঠিকই, কিন্তু তাদের কাজকর্ম এখনো এমন যে কোনো সাধারণ নাগরিক প্রশ্ন করতেই পারে—এই দল যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পায়, তবে তারা কীভাবে দেশ চালাবে, যখন তারা মাদরাসার খাবার সামলাতে পারে না? বিএনপি আসলে আর রাজনৈতিক দল না, এটা একটা অনিয়ন্ত্রিত ভাঙা মেশিন—যেটা যেদিকে গড়ায়, সেদিকেই ধ্বংস টেনে আনে।
মাদরাসার এই খাবার খাওয়ার ঘটনাকে কেউ কেউ ছোট করে দেখতে চাইতে পারে, কিন্তু এটা আসলে একটা অশনিসংকেত। এটাই সেই রাজনৈতিক পঁচনের চূড়ান্ত পর্যায়, যেখানে আদব, ভদ্রতা, সম্মান, নৈতিকতা সব পেছনে পড়ে গেছে। সামনে কেবল ক্ষুধার্ত ক্ষমতালিপ্সু একদল লোক, যারা রাষ্ট্র না, মানুষ না, নীতিও না—তাদের চাই শুধু দখল। আজ খাবারের পাতিল, কাল ব্যালট বাক্স।