রাজধানীর গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত পরিকল্পিত মেট্রোরেল লাইন-৫ (সাউদার্ন রুট) প্রকল্প আবারও অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সম্প্রতি প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হলেও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ব্যয় যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়ে প্রস্তাবটি ফেরত দিয়েছেন।
প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে প্রায় ৫৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা ধরা হলেও পরবর্তী সময়ে তা কমিয়ে আনা হয় ৪৭ হাজার ৬৪৯ কোটিতে। তবুও চূড়ান্ত অনুমোদন আটকে গেল। উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ব্যয়ের প্রাক্কলনে আরও সতর্কভাবে মূল্যায়ন প্রয়োজন।
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে নগরবাসী ও বিভিন্ন মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঢাকার বিপুল সংখ্যক মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য প্রকল্পটি জরুরি হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত অবস্থান এর অগ্রগতিকে আটকে দিয়েছে।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, গাবতলী থেকে পান্থপথ, হাতিরঝিল ও আফতাবনগর হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭.২ কিলোমিটার দীর্ঘ রুট নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে ১৩.১ কিলোমিটার হবে ভূগর্ভস্থ ও ৪.১ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ। পুরো রুটে ১৫টি স্টেশন থাকত এবং প্রতিদিন প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার যাত্রী সেবা নিতে পারত।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এর সুফল হতো উল্লেখযোগ্য। এখন গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি যেতে যেখানে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়, মেট্রোরেল চালু হলে যাওয়া যাবে মাত্র ২৮ মিনিটে। বছরে প্রায় ২১৪ কোটি ৯০ লাখ কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে এডিবির এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বছরে ৪১ হাজার ২২০ টন জ্বালানি সাশ্রয় হবে। প্রায় ১ হাজার ৫০টি গাড়ির চাপ কমে যাবে, এর ফলে বছরে ২ লাখ ৭ হাজার ৯৬৪ টন কার্বন নিঃসরণ কমে আসবে। এভাবে প্রকল্পটি শুধু যানজট নিরসন নয়, পরিবেশ সংরক্ষণেও বড় অবদান রাখবে।
তবে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ জানায়, পুনর্মূল্যায়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্প স্থগিত থাকবে। ফলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) অপেক্ষায় থাকতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে বিশেষ করে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ প্রকল্প অনুমোদনের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
প্রকল্পটির প্রথম প্রস্তাব আসে ২০২৩ সালের শেষ দিকে। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা এবং শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০৩০ সাল। পরবর্তীতে প্রায় ১২.৭৬ শতাংশ ব্যয় কমানো হলেও অনুমোদন মেলেনি।
এদিকে মেট্রোরেল লাইন-২ ও লাইন-৫ (নর্দার্ন) প্রকল্পও পুনর্মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। জাইকার অর্থায়নে অনুমোদিত আরও দুটি প্রকল্পও ব্যয় বৃদ্ধি ও টেন্ডার জটিলতায় সমস্যায় পড়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, টাকার অবমূল্যায়ন ও অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে জাইকার বাইরে অন্য দেশ বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
এমআরটি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১২৯.৯ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে। তবে সাউদার্ন রুটসহ একাধিক প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।