আবু মকসুদ
এটা কেবল একজন ভবঘুরে বাউলের চুল কেটে দেওয়া নয় এটা আমাদের ইতিহাসের শিরা ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা। যে চুলে ছিল ধুলোর গন্ধ, নদীর কাশফুলের কোমলতা, বাংলার সুরের স্পন্দন সেই চুলে হাত দিয়েছে একদল বিকৃত, উন্মাদ, অন্ধকারের পূজারী। তারা জানে না, এই চুল কেটে দেওয়া মানে একটি শরীরের অপমান নয় এটা একটি জাতির আত্মাকে ছিন্নভিন্ন করা।
ধর্মের মুখোশ পরে যারা হিংস্রতা চালায়, তারা ধর্মের রক্ষক নয় তারা ঘৃণার দালাল। আজ তারা একজন বাউলকে অপমান করেছে, কাল তারা আমাদের কণ্ঠ ছিঁড়ে ফেলবে, আমাদের বই পোড়াবে, আমাদের সন্তানের গান থামিয়ে দেবে। তাদের হাতে ধর্ম নয়, আছে ভয়, আছে রক্ত, আছে আগুনে শান দেওয়া ছুরি।
আর ইউনুস সরকার? গণ্ডের মতো দাঁড়িয়ে ছিল যেন এক নির্বিকার পাথর। চোখের সামনে একজন মানুষকে অপমান করা হলো, অথচ তথাকথিত নোবেল গণ্ড নিরব। এই নীরবতা নিরপেক্ষতা নয় এটা অপরাধের সঙ্গে হাত মেলানো। ইতিহাস জানে, যে শাসক অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় না, সে নিজেই অন্যায় হয়ে ওঠে। আর প্রতিটি অন্যায় বিপুল প্রতিরোধ হয়ে ফিরে আসে।
একজন বাউল কেবল গান গাওয়া মানুষ নয় তিনি বাংলার প্রাণ, বাংলার নদী, বাংলার মাটি। তার চুলে ছিল বাংলার বাতাস, বাংলার গন্ধ। সেই চুল কেটে দেওয়া মানে আমাদের সাংস্কৃতিক শেকড়ে কুঠারাঘাত। এটা কেবল শারীরিক নির্যাতন নয় এটা জাতিগত অপমান।
আজ যদি আমরা চুপ থাকি, কাল এই উন্মাদরা আমাদের স্বপ্ন কেটে দেবে। আজ যে হাতে কাঁচি, কাল সে হাতে থাকবে রক্তাক্ত ছুরি। তাই এই প্রতিবাদ কেবল একজন বাউলের জন্য নয় এটা আমাদের অস্তিত্বের জন্য।
আমরা বলছি: এটা কেবল একটি অপরাধ নয় এটা সভ্যতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এটা কেবল একজনের চুল নয় এটা একটি জাতির মর্যাদা। ইউনুস সরকার, যদি তুমি আজ চুপ থাকো, যদি অপরাধীদের বিচার না করো তবে ইতিহাস তোমার নাম লিখবে অন্ধকারের কালি দিয়ে। তুমি তখন কেবল একজন প্রশাসক নও তুমি সেই অন্ধকারের শরিক। একদিন এভাবে ধরে তোমাকেও ছেটে ফেলা হবে।
আমরা চাই না লালনের দেশ অন্ধকারে ডুবে যাক। আমরা চাই, আমাদের নদী, আমাদের গান, আমাদের শেকড় বেঁচে থাকুক। তাই বলছি, ধর্মান্ধ উন্মাদদের উদ্দেশে: তোমরা চুল কেটেছ, কিন্তু আমরা আমাদের মাটি কেটে ফেলতে দেব না। প্রতিটি কাটা চুলের প্রতিশোধ নেবে সময় আর সেই সময় আসছে, দ্রুত, অপ্রতিরোধ্যভাবে।
এই প্রতিবাদ অস্তিত্বের ডাক। আজ যদি আমরা না জাগি, আগামীকাল ইতিহাস আমাদের গলা টিপে ধরবে। সময় এসেছে অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর শপথ নেওয়ার। আর সেই শপথ শুরু হোক এই একটি শব্দ দিয়ে: প্রতিরোধ।