সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিলের মাধ্যমে তাদের সদর্প উপস্থিতি জানান দিয়েছে। মিছিলগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল দলের শক্তি প্রদর্শন এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। কোথাও কোথাও একদিনে একাধিক মিছিলে সহস্রাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে, যা দলের পুনর্জাগরণের একটি ইঙ্গিত বহন করে।
গত বছরের ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে দমন-পীড়ন-নিষ্পেশনের লক্ষ্যে প্রকাশ্যে ও চোরাগোপ্তা হামলা, নিধনযজ্ঞ চলছে। পাশাপাশি চলছে বিনা দোষে বা গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে রক্তাক্ত করে পুলিশে সোপর্দ করা, কারাগারে পাঠিয়ে সেখানে পুনরায় নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করার মত বীভৎস কর্মকাণ্ড। রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহনকারী ড. ইউনূস ইতিমধ্যে দেশে এবং বহির্বিশ্বে নৃশংস শাসক হসেবে পরিচিতি পেয়েছেন এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ঘটনাক্রমের মাধ্যমে।
অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর চলছে গণগ্রেপ্তার ও রাষ্ট্রীয় মদদে নিধনযজ্ঞ। আর এতে ব্যবহার করা হচ্ছে পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থাকে। দেশজুড়ে অপরাধের মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে যেখানে, সেখানে অপরাধ নির্মূলে কাজ না করে এসব বাহিনী ও সংস্থা কাজ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্মূলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউনূস সরকার ও তার প্রশাসন ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় পতিত হয়েছে আওয়ামী লীগের এমন উত্থানে। নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বলে মনে করছে পুলিশ-প্রশাসন। তাই এভাবে নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে।
আজ ২৪শে সেপ্টেম্বর, আওয়ামী লীগ তাদের বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে লক্ষাধিক মানুষের সমাগমে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় মিছিলের পরিকল্পনা করেছিল। ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হল থেকে পান্থপথ-গ্রিনরোড চৌরাস্তা পর্যন্ত রাজপথ ছিল লোকে লোকারণ্য।
পরিকল্পনা ছিল, একটি মিছিল শুরু হলে অপেক্ষমাণ জনতা তাতে যোগ দিয়ে এটিকে বিশাল রূপ দেবে। কিন্তু সমন্বয়ের অভাব, কিছু টেলিগ্রাম গ্রুপ থেকে তথ্য ফাঁস হওয়া এবং পুলিশ-সেনাবাহিনীর আগাম উপস্থিতির কারণে মিছিল শেষ পর্যন্ত সংগঠিত হতে পারেনি। নিরাপত্তার কারণে অনেক নেতাকর্মী ফিরে গেছেন। ফলে, পরিকল্পিত বিশাল মিছিলের বদলে খণ্ড খণ্ড মিছিলই অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তবে, এই প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাল ছাড়েননি। সরেজমিনে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা ধীরে ধীরে রাজপথে জনসমাগম বাড়াচ্ছে এবং সংগঠিত হওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। অনভিজ্ঞতার কারণে এবার হয়তো তারা পূর্ণ সাফল্য পায়নি, কিন্তু এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে তাদের মিছিল ক্রমশ বৃহৎ ও শক্তিশালী হবে।
তাদের মতে, আওয়ামী লীগের এই প্রচেষ্টা কেবল রাজপথ দখলের জন্য নয়, বরং তাদের হারানো রাজনৈতিক অবস্থান পুনরুদ্ধারের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
পুলিশ কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, ৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগের যে সাহস ছিল না, এখন তারা অনেক বেশি সাহসী এবং মিছিলে লোকের সংখ্যা বাড়ছে। আগে ভোরে মিছিল হতো, এখন প্রকাশ্যে দিনের আলোয় পাবলিক প্লেসে মিছিল করছে তারা। দিনদিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্রমশ সংগঠিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন তারা অবশ্যই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের পূর্বের অবস্থান ফিরিয়ে আনবে।
এই ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং জনগণের সমর্থনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক মাঠে তাদের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে চলেছে।
বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে শান্তিশৃঙ্খলা নষ্টের ষড়যন্ত্র করছে। আজকেও এমনই একটি ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতির সময়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তা নস্যাৎ করে দেয়। এখন পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ২৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৭টি ব্যানার উদ্ধার করা হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে এবং নেতাকর্মীদের নৃশংসভাবে নির্মূল করার লক্ষ্যে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
ঢাকার আবাসিক হোটেল, ফ্ল্যাট ও ছাত্রাবাসে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী থাকলে তাদের তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছে ডিএমপি। তথ্যদাতার নাম-পরিচয় গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, আবাসিক হোটেল, ফ্ল্যাট ও ছাত্রাবাসে পুলিশের রেইড দেওয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। অনেক ফ্ল্যাটে থাকছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তথ্য দিলে পুলিশ সেখানে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করবে। তাদের গ্রেপ্তার করলে ঝটিকা মিছিলের সংখ্যা কমে যাবে। যারা তথ্য দেবেন তাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে।