আকাশ আনোয়ার
সংগীত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষা জীবনে সংগীত, শিক্ষাকে সুন্দর করে, অর্থবহ করে। এমেরিকা, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানী, ইটালি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ইত্যাদি দেশগুলোর প্রায়মিক শিক্ষা শতভাগ সংগীত নির্ভর। সংগীত ছাড়াও ওরা শেখে সংস্কৃতি, নৃত্য্য, নাটক। তাই বাঙালি মা বাবা মাত্রেই লক্ষ্য থাকে তাদের সন্তানদের যদি তারা এসব দেশে শিক্ষা দিতে পারেন। এমন কি ধর্মীয় কট্টরপন্থীরাও সে চাওয়ায় একধাপ এগিয়ে। তবে তাদের নিজের দেশে সংগীত শিক্ষাকে সংকুচিত করেছেন। ছবি দেখুন, একজন সংগীত শিক্ষকের করুন দশা। পুরো দেশ জুড়ে সংগীত শিক্ষা সংকটে। যে মেয়েটি একদিন জীবনের বন্দনা করেছে, সংগীত ভালোবেসে শিল্পী হয়েছে, শিক্ষক হয়েছেন, সেই সংগীত শিক্ষকরা হচ্ছেন অত্যাচারিত। মার খাচ্ছেন, নির্যাতন করে, পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে তাঁদের।
বাংলাদেশ মানেই উদোর পিন্ডি বুঁদোর ঘাড়ে। তাসনিম জারা’র মতো সুযোগ সন্ধানীরা সকল অন্যায়ের নেপথ্যে থেকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন। কই তাসনিম জারাকে তো কখনো দেখিনি দেশের শিক্ষার্থীদের এমন সংকটে পাশে দাঁড়াতে, তিনি তবে ইংল্যান্ড দেশটিতে কি শিখলেন? যে রাজনৈতিক দল এখনো জনগনের ম্যান্ডেট পায় নি, তিনি কি করে যান ইউনূসের সাথে? আর ইউনূস? তাদের যেন কিচ্ছু হয়নি! তাদের দেশে শিক্ষা সংকট, স্কুলে শিক্ষক নেই, ছাত্র-ছাত্রী নেই, ইউনূস সরকারের এসবে মাথা ব্যাথা নেই! কেনো?
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যখন শিক্ষার্থী সংগ্রহে গ্রামে গ্রামে যান, অভিভাবকেরা জানান, তাদের সন্তান মাদ্রাসা বা কওমিতে ভর্তি আছে। এই হলো বাংলাদেশের চিত্র। বাংলাদেশে প্রচলিত বিদ্যালয়গুলো এখন আর স্কুল নেই। কওমি মাদ্রাসা হয়েছে। সংগীত নেই, সংস্কৃতি নেই, নাটক নেই, কি শিখছে ওরা? বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষায় ‘সংগীত শিক্ষক’ নিয়োগে চলছে নজরদারী, সংগীত কি তবে সত্যি সত্যি বাদ পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে?
বাংলাদেশের কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বলেছেন; ‘বাংলাদেশে শিল্পীদের কদর কোনোদিন ছিল না, এখনও নেই’, তিনি আরো বলেছেন;‘যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন তারা যদি গানবাজনার কিছু না বোঝেন, মূল্য না দেন তাহলে তো আমাদের করার কিছু নাই। জোর করে কিছু হবে না।’ প্রিয় শিল্পীর এ কথায় মনে হয়েছে কেউ যেন সে কথা শোনেন নি। একজন শিল্পীর এ কথায় কেন তরুন প্রজন্ম জ্বলে ওঠেনি অবাক হয়েছি। সত্য বলতে সবার এতো দ্বিধা কেনো? কই,! কেউ তো রেডিও, টিভি, ইউটিউব, ফেসবুক দেখা বন্ধ করেনি!? এহেন অবস্থায় শিল্পীরা কেন নীরব? কি হবে চলমান সংগীত শিক্ষকদের? কন্ঠ শিল্পী, যন্ত্র শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, সংগীত গবেষকদের? কি হবে দেশজুড়ে বেড়ে ওঠা সংগীত স্কুল এবং সংগীত সংগঠকদের? কি হবে দেশজুড়ে জন্ম নেয়া কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের?
সংগীত, নাটক, কবিতা, আবৃত্তি, নৃত্য্ অঙ্গনের পুরোধা শিল্পীরা নিরব কেনো? সংগীতে আঘাত লাগলে কি শুধু সংগীত শিল্পীরাই সংকটে পড়বেন? নাটক, নৃত্য, কবিতা, আবৃত্তি, নৃত্য শিল্পীরা কি পাশ ফিরে ঘুমাবেন? কোথায় গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন, কোথায় সংস্কৃতি সম্মেলন পরিষদ? কাকে ভয় করেন? বুক বেঁধে উঠে দাঁড়ান। এখনো সময় আছে। পুরো দেশের সংগীত, সংস্কৃতি, নাটক, নৃত্য, লেখক সমাজ জেগে উঠুন। নিশ্চয় সংগীত বাঙালি সমাজে আগের মতোই জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আজ ও আগামীর শিশুদের শিক্ষাকে সুন্দর করবে।
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।