মিলটন রহমান
গত কয়েক দিন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়েছি আসামের দিকে। কেবল আসাম নয় পুরো ভারতবর্ষেই(!) একই মাতম ‘জুবিন গার্গ‘। জুবিনের প্রয়াণে কাঁদছে আসামসহ পুরো ভারত। কেবল ভারতই বা বলি কেনো, বলি পৃথিবীর প্রায় চল্লিশটি ভাষাভাষী মানুষ রয়েছে শোকে। জুবিন চল্লিশটিরও বেশি ভাষায় গান করেছেন। সিঙ্গাপুরে সাউথ এশিয়ান মিউজিক ফ্যাস্টিভালে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে সেখানে সমুদ্রে হলো তার শেষ যাত্রা। তাঁর মৃত্যুতে আসামে লক্ষ লক্ষ মানুষ নেমে আসে রাস্তায়। জাতীয় স্টেডিয়ামে জুবিনের নিথরদেহ ঘিরে পাঁচ লক্ষাধীক মানুষের মাতম।

আমি নির্বাক হয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে দেখেছি। কয়েকদিন আগে আমাদের সঙ্গীতের দিকপাল ফরিদা পারভীন চলে যান অনন্তের পথে। তাঁকে আমরা শ্রদ্ধা জানিয়েছি। আবার তাঁকে কটু বাক্যবাণে জর্জরিত করতেও ছাড়ি নি। এমন একজন শিল্পীর প্রয়াণে দেশের সঙ্গীত জগত নয় কেবল, সমাজ, রাজনীতি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রের অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কারণ একজন শিল্পী গান করেন সমাজ. রাষ্ট্র, রাজনীতি, সংস্কৃতি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রের শুদ্ধতার আহবানে। এ গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ফরিদা পারভীন আমৃত্যু করে গেছেন। তার প্রতিদান আমরা কি দিলাম! আমাদের পাশের রাজ্যইতো আসাম। দেখুন জুবিন গার্গকে হারিয়ে তারা কিভাবে তিনদিন রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছে। এমনকি এ তিনদিন অনেকের চূলায় রান্না ওঠে নি। আসামের মানুষ বুঝতে পেরেছে তারা কি হারিয়েছে। জুবিন কেবল শিল্পীই ছিলেন না, ছিলেন একজন মানবিক মানুষ। সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে থেকেছেন, বাড়ির দরজা সব সময় খোলা রেখেছিলেন তাদের জন্য। সরকারী ভুল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান ছিলো দৃঢ়। কয়েকদিন আগেও একটি জ্বালানি প্রকল্পের জন্য সরকার জমি বিক্রি করার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন জুবিন। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটা ভিডিও পোস্ট করেছিলেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে জুবিনও কি সরকারের রোষাণলের শিকার! এ বিষয়ে এখনি বলার সময় আসে নি। ভূরাজনৈতিক ডাকাতির কারণে সব রাষ্ট্রই এখন হন্তারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। তারপরও আমাদের মনে রাখতে হবে এ কৃষ্ণকাল থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে অসম রাজনৈতিক চর্চা এবং সামাজিক বৈষম্যহীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
কৈশোরকাল থেকে আমি অসমীয়া গানের ভক্ত। এ অনুরাগ আমার তৈরী হয়েছিলো ভূপেন হাজারীকার গানের সূত্রে। এর পর আরো অনেক শিল্পীর গান আমি শুনতাম। তারমধ্যে জুবিন গার্গ একজন। তবে তাঁর যে এতো জনপ্রিয়তা ছিলো তা জানতাম না। তাঁর বেঁচে থাকাটা জরুরী ছিলো-তা জানিয়ে দিলো এ অকাল প্রয়াণ। তবে কিছু মানুষ(বলবো মহামানব) দেহত্যাগ করলেও তাঁর কাজের জন্য বেঁচে থাকেন মানুষের মাঝে। বিভিন্ন সংকটকালে তাঁদের রেখে যাওয়া কর্মই শক্তি যোগায়। ফরিদা পারভীন এবং জুবিন গার্গ সেই মহান ব্যক্তিত্ব। দু‘জনের প্রতি অতল শ্রদ্ধা আমার।