নঈম নিজাম
লেখকের নাম জর্জ অরওয়েল। বইটির নাম অ্যানিমেল ফার্ম Animal Farm। বইটি সোভিয়েত রাশিয়ার বিপ্লব আর স্তালিনবাদী শাসনের সমালোচনা। ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত এই রূপক উপন্যাসে খামারের প্রাণীদের সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র আর রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে তুলে আনা হয়েছে। বইতে আছে, প্রাণীরা মানুষের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তারা নিজেদের “সমান অধিকার” প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। কিন্তু ধীরে ধীরে শূকররা ক্ষমতা দখল করে স্বৈরাচারী হয়ে আগের অবস্থার কাছাকাছি ফিরে যায়।
এই বই পড়তে গিয়ে হোঁচট খেলাম । শুনুন ….
এক খামারের মালিক মিস্টার জোনস ছিল অলস আর নিষ্ঠুর মানুষ। প্রাণীরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করত, কিন্তু তাদের খাওয়ারও কষ্ট হতো। এক রাতে খামারের এক বুড়ো শূকর, নাম ওল্ড মেজর, সবাইকে ডেকে বলল:
“বন্ধুরা, আমরা এত কষ্ট করি, কিন্তু মানুষ আমাদের শোষণ করে। মানুষই আমাদের আসল শত্রু। যদি আমরা একসঙ্গে হই, তাহলে নিজেরাই আমাদের খামার চালাতে পারব।”
প্রাণীরা খুব অনুপ্রাণিত হলো। কিছুদিন পরেই তারা বিদ্রোহ করল। সবাই মিলে মানুষদের খামার থেকে তাড়িয়ে দিল। এখন খামারের নাম হলো অ্যানিমেল ফার্ম। প্রাণীরা শপথ করল—“সব প্রাণী সমান।”
শুরুতে প্রাণীরা আনন্দে ভরে উঠল। সবাই মিলে কাজ করত, গান গাইত, নিজেদের নিয়ম বানাল। শূকররা সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছিল, তাই তারা নেতৃত্ব নিল। তাদের মধ্যে দু’জন ছিল—স্নোবল আর নেপোলিয়ন।
স্নোবল প্রাণীদের উন্নতি চাইত। সে বিদ্যুৎ তৈরি করতে উইন্ডমিল বানানোর পরিকল্পনা করল। কিন্তু নেপোলিয়ন ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে চাইত। একদিন সে হঠাৎ ভয়ঙ্কর কুকুর ছেড়ে স্নোবলকে তাড়িয়ে দিল। খামারের নেতা হলো একাই হলো নেপোলিয়ন।
এরপর থেকে খামারের নিয়ম পাল্টাতে শুরু হলো। নিয়ম বদল হতে শুরু করলো। আগে নিয়ম ছিল, “সব প্রাণী সমান”। নতুনভাবে নিয়ম হলো , “ সব প্রাণী সমান, তবে কিছু প্রাণী বেশি সমান।” আগে লেখা ছিল, “প্রাণীরা কখনো মানুষের মতো পোশাক পরবে না”, পরে শূকররা স্যুট-টাই পরে ঘুরতে লাগল।
শুরুতে সবার প্রিয় ঘোড়া বক্সার দিন-রাত খেটে যেত। তার বিশ্বাস ছিল—“আমি আরও কঠোর পরিশ্রম করব, তাতে সব ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু একদিন সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। শূকররা বলল, তাকে হাসপাতালে পাঠানো হবে। অথচ গোপনে তাকে বিক্রি করে দিল কসাইখানায়। প্রাণীরা কান্নায় ভেঙে পড়ল।
সময় যেতে লাগল। শূকররা দিন দিন আরও বেশি মানুষদের মতো হয়ে উঠল। তারা দুই পায়ে হাঁটতে লাগল, হাতে চাবুক ধরল, মানুষের সঙ্গে মদ খেতে বসল।
একদিন প্রাণীরা বাড়ির জানালা দিয়ে দেখল—শূকর আর মানুষ একসঙ্গে বসে খাচ্ছে, হাসছে, খেলছে। প্রাণীরা হতভম্ব হয়ে গেল। তারা দেখল, টেবিলে বসা শূকর আর মানুষ—এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
এভাবেই, যাদের ওপর ভরসা করে প্রাণীরা বিদ্রোহ করেছিল, সেই শূকররাই শেষে আগের মানুষের মতো শাসক হয়ে গেল।