ফ্রান্সভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা জাস্টিসমেকারস বাংলাদেশ (জেএমবিএফ)-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহানুর ইসলাম বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। তিনি জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (OHCHR) এবং বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদকের কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের সামনে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গতকাল ৩রা অক্টোবর দুপুরে OHCHR-এর এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের প্রধান মি. ররি মুনগোভেনের সঙ্গে বৈঠকে অ্যাডভোকেট শাহানুর জেএমবিএফ-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, রাষ্ট্রীয় মদদে চলমান সহিংসতা এবং নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচনের তথ্য তুলে ধরা হয়।
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ঘটনা আইনজীবীদের ওপর বিস্তৃত দমন-পীড়নের অংশ। এছাড়া সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের জন্য সাজানো মামলার ব্যবহার এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের বিষয়ও তিনি উত্থাপন করেন। সাংবাদিক ফারজানা রূপা ও শাকিল দম্পতি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দী থাকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন অ্যাডভোকেট শাহানুর।
প্রত্যুত্তরে মুনগোভেন জানান, জাতিসংঘ সংস্কার কার্যক্রমে অন্তর্বর্তী সরকারকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, সাজানো মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেন যে উত্থাপিত বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
বৈঠকে অ্যাডভোকেট শাহানুর জেএমবিএফ-এর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন—বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যুর সারসংক্ষেপ, আইনজীবীদের ওপর দমন-পীড়নের পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণ, এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে একটি বার্ষিক মূল্যায়ন। বৈঠকে জেএমবিএফ সদস্য মো. শফিক আহমদ এবং OHCHR কর্মকর্তা লিভিয়া কসেনজা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সকালে অ্যাডভোকেট শাহানুর বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদকের কার্যালয়ের প্রতিনিধির সঙ্গেও বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেলানি সান্তিজো সান্দোভাল।
বৈঠকে অ্যাডভোকেট শাহানুর বলেন, বাংলাদেশে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে “পদ্ধতিগত হয়রানি, ইচ্ছাকৃত গ্রেপ্তার এবং সাজানো মামলা” চলছে। বিশেষ প্রতিবেদকের কার্যালয় এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
বৈঠকের পর অ্যাডভোকেট শাহানুর সাংবাদিকদের বলেন, “এই আলোচনা ছিল অত্যন্ত জরুরি, যাতে বাংলাদেশের ভুক্তভোগীদের কণ্ঠ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিফলিত হয়। আমরা প্রমাণ তুলে ধরতে থাকব, যতদিন না জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।”