রিপাবলিকান পর্টিতে পরামর্শদাতা প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো এবং মিডল ইস্ট ফোরামের নীতি বিশ্লেষণ পরিচালক মাইকেল রুবিন সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিওকে সতর্ক করেছেন যে, তাদের উচিত নয় বাইডেন প্রশাসনের বাংলাদেশ বিষয়ক নীতি পুনরায় অনুসরণ করা। যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশকে ধর্মীয় স্বাধীনতার পর্যবেক্ষণ তালিকায় রাখতে হবে, জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং আসল নেতৃত্ব হিসেবে শেখ হাসিনাকে স্বীকৃতি দিতে হবে যতক্ষণ না সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
রুবিনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি গুরুতর সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হতে পারে।
ফার্ষ্টপোষ্টে লিখিত একটি নিবন্ধে রুবিন বলেন, এক বছরেরও বেশি আগে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শিক্ষার্থী আন্দোলন এবং বিক্ষোভের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সমালোচকরা অভিযোগ করেন যে তিনি এবং তার পরিবার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজেদের গৌরব ও ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করেছেন, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছেন, এবং সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ নিয়েছেন।
যদিও, ২০০৮ সালের নির্বাচনে মাইকেল রুবিন নিজেই পর্যবেক্ষক ছিলেন এবং তখনকার নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও ন্যায়সঙ্গতা নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব ছিল, নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল।
শেখ হাসিনাকে অপসারণের পর শিক্ষার্থী বিক্ষোভ, যা মূলত মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে শুরু হয়েছিল, সহিংস আকার ধারণ করে।
রুবিনের মতে, প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের আইএসআই, সম্ভবত কাতার ও তুরস্কের অর্থায়নে এই বিক্ষোভকে উস্কানি দেওয়া হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন তখন এই পরিবর্তনকে গণতান্ত্রিক অগ্রগতি হিসেবে উদযাপন করেছে। জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে বাইডেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী আন্দোলনের প্রশংসা করেছিলেন এবং “নতুন সংস্কারমূলক এজেন্ডা” বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
রুবিনের মতে, ড. ইউনূসের “সংস্কার” প্রকৃতপক্ষে স্বৈরশাসন ও প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজ নেতা ও প্রাক্তন ধর্মনিরপেক্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন এবং বাংলাদেশের হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করেছেন। ইউনূস তার প্রায় দুই দশক আগের নোবেল শান্তি পুরস্কারকে এমনভাবে ব্যবহার করছেন, যেভাবে ইয়েমেনি মুসলিম ব্রাদারহুডের তাওয়াক্কল কারমান তার পুরস্কার ব্যবহার করেছিলেন ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ট্রাম্প যদি বাংলাদেশ সম্পর্কে একই ভুল নীতি চালিয়ে যান, তবে এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য জিমি কার্টারের ইরান নীতির ভুলের মতো দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল তৈরি করবে।
রুবিনের মতে, ট্রাম্প ও রুবিওর উচিত বাইডেন ও তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ব্যর্থ নীতির পরিবর্তন করা। তারা উচিত প্রকৃত ঘটনা যেমন তা, স্বীকার করা এবং ইউনূসের বিরুদ্ধে তার দায়িত্ব ও সাংবাদিক, প্রাক্তন আইনপ্রণেতা ও নাগরিক সমাজ নেতাদের নিপীড়নের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশকে ধর্মীয় স্বাধীনতার পর্যবেক্ষণ তালিকায় রাখতে হবে, জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং আসল নেতৃত্ব হিসেবে শেখ হাসিনাকে স্বীকৃতি দিতে হবে যতক্ষণ না সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
রুবিন সতর্ক করেছেন, অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হবে।