বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমাবনতির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ছয়জন সংসদ সদস্য ও হাউজ অব লর্ডসের একজন সদস্য।
তারা এক চিঠিতে যুক্তরাজ্য সরকার, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে তাদের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা পালনে বাধ্য করতে।
গতকাল ৪ঠা অক্টোবর, শনিবার দ্য টাইমস পত্রিকার সম্পাদকের নিকট চিঠি বিভাগে প্রকাশিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থার কাঠামোগত ব্যর্থতা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার ও জামিন বঞ্চনা, নির্দিষ্ট দলগুলোকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর লক্ষ্যভিত্তিক হামলা বেড়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিকে তারা “গভীরভাবে উদ্বেগজনক” বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এটি গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়; বরং এটি একটি আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা। তাই যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও), জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়া যাতে তারা নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করে, বিচার ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ করে।
এমপিরা মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে একটি পরিষ্কার ও সময়সীমাবদ্ধ রূপরেখা তৈরি করে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা এখন জরুরি।
তারা জোর দিয়ে বলেন, স্থিতিশীল বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া আস্থা ও জবাবদিহিতা পুনর্গঠন সম্ভব নয়।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী স্টিভেন পাওলস কেসি, কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্য বব ব্ল্যাকম্যান, লেবার পার্টির এমপি জাস আথওয়াল, নিল কয়েল, গুরিন্দর সিং এবং লুক একহার্স্ট। এছাড়া হাউজ অব লর্ডসের ব্যারোনেস স্মিথ অব ল্যানফায়েসও এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন।
এই আহ্বান এমন সময়ে এলো, যখন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি ঘিরে নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে, আর ব্রিটিশ এমপিদের এই প্রকাশ্য অবস্থান সেই আলোচনাকে আরও জোরালো করল।
বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোর তৎপরতা নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার প্রশ্নটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, শ্রমশক্তি, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং বিশেষ করে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো এ অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অত্যন্ত সংবেদনশীল ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অবাধ নির্বাচনের অভাব শুধু অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বৈদেশিক সহায়তা এবং কূটনৈতিক অবস্থানের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ব্রিটিশ এমপিদের এই সাম্প্রতিক আহ্বান তাই শুধু নীতিগত নয়, বরং কৌশলগত বার্তাও বহন করছে—বাংলাদেশকে তার গণতান্ত্রিক কাঠামো ও মানবাধিকার রক্ষার দায় এড়ানো যাবে না।