আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে একটি বিতর্কিত ও উদ্বেগজনক পরিকল্পনার খবর সামনে এসেছে। দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন দিলেও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চান। এরইমধ্যে এই পরিকল্পনার নীল নকশাও তৈরি হয়েছে।
সূত্র বলছে, ইউনূস তার ঘনিষ্ঠ জনদের দিয়ে ১০০ আসন ধরে রাখতে চান। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদসহ ১০০ জনকে স্বতন্ত্রভাবে জিতিয়ে আনতে চান ইউনূস।
ঐক্যের সমঝোতা হলে জামায়াত ১০০ আসন ছেড়ে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ থেকে স্পষ্ট যে তারাও ইউনূসকে ১০০ আসন ছেড়ে দিতে চায়।
এই ১০০ আসন ছেড়ে দিলে আসলে কী হবে? সূত্র বলছে, বিএনপিকে ১০০ আসন দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইউনূস-জামায়াত জোট। আর ইউনূসের কাছে ১০০ আসন থাকলে যে কোনো দলই সরকার গঠন করতে হলে তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ ও পছন্দের মানুষজনকে রাখতে হবে। ১০০ আসন পেলে তাদের ছাড়া সরকার গঠন করার সম্ভব হবে না।
এই পরিকল্পনা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। ইউনুস নিয়ন্ত্রিত সরকারের অধীনে এমন আসন বণ্টনের এই প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জনগণের অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন ছাড়া এই ধরনের পরিকল্পনা দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আসন্ন নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া জরুরি, অন্যথায় গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও দুর্বল হবে।
পাতানো নির্বাচন ও পর্যবেক্ষক সংস্থার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন
নির্বাচন কমিশন (ইসি) পাতানো নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখানোর জন্য ৭৩টি পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকা প্রকাশ করেছে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে অনেকের কার্যালয় নেই, কেউ নিজের বাসভবন বা পরিত্যক্ত ঘরকে কার্যালয় হিসেবে দেখিয়েছে। কিছু সংস্থার নেতৃত্বে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন, যা ইসির নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
উদাহরণস্বরূপ, কুড়িগ্রামের অগ্রযাত্রা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ঠিকানা শুধুমাত্র ‘সিন্দুরমতি, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম’। স্থানীয়দের সহায়তায় সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবিরের বাড়িতে পৌঁছালে তিনি জানান, সংস্থাটির বর্তমানে কোনো কার্যক্রম নেই। একইভাবে, কুড়িগ্রামের গরীব উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয় আসলে নির্বাহী পরিচালক আবদুল লতিফের বাড়ি, যেখানে তিনি ও তাঁর ছেলে ছাড়া কোনো কর্মী নেই।
ইসির নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিরা পর্যবেক্ষক সংস্থার নির্বাহী বা পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না। কিন্তু অনুসন্ধানে পাঁচটি সংস্থার নেতৃত্বে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার সংগতি সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বশীর আহাম্মেদ ছাত্রদলের সাবেক নেতা। ঝালকাঠির হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থার সহসভাপতি মোক্তার হোসেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, সংস্থাগুলোর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও ঠিকানা মোটাদাগে যাচাই করা হয়েছে। তবে, গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য সংগ্রহের পর তালিকা পুনর্বিবেচনা করা হবে। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে আপত্তি জানানোর সুযোগ রয়েছে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদে ছলচাতুরি
নির্বাচন কমিশনের চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে। গত ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের দাবি করা হলেও, চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। ফলে লক্ষাধিক নাগরিক ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
একজন চরবাসী বলেন, “বছরের পর বছর আমরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। এবারও কেউ এসে আমাদের তথ্য নেয়নি, অথচ ইসি বলছে কাজ শেষ হয়েছে। এটা স্পষ্ট ছলচাতুরি!” আগস্টে প্রকাশিত খসড়া তালিকায় ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬১ লাখ দেখানো হলেও, এতে চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকার অসংখ্য নাম অনুপস্থিত।
আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ পাচ্ছে। ইউনূস -জামায়াত জোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত সরকার গঠন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদে ত্রুটি, এবং গণমাধ্যমের সংকোচনের মতো বিষয়গুলো গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করছে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যে বিতর্ক ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার জন্য গুরুতর সংকেত। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও, তাঁর বিরুদ্ধে “ক্ষমতা না ছাড়ার পরিকল্পনা” এবং “নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের নীলনকশা” সংক্রান্ত অভিযোগগুলো দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে একটি অস্বচ্ছ ও একতরফা পথে ঠেলে দিতে পারে।(সূত্র: আওয়ামীলীগ পেইজ)