গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তারা শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করেছেন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী গাজায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর থেকে অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঘোষণা করেছেন, জাতিসংঘ চুক্তির ‘পূর্ণ বাস্তবায়নে’ সহায়তা করবে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন কার্যক্রম বাড়াবে। তিনি সব পক্ষকে চুক্তির শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানান। এর মধ্যে আছে জিম্মিদের মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি রক্ষা এবং অবিলম্বে মানবিক ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করা। গুতেরেস বলেন, (গাজার) এই দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে হবে। আমি সব পক্ষকে আহ্বান জানাই এই ঐতিহাসিক সুযোগটি কাজে লাগাতে। অধিকারের স্বীকৃতি, দখলের অবসান এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করে এমন একটি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে, যাতে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিরা শান্তি ও নিরাপত্তায় বসবাস করতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, দুই বছরেরও বেশি সংঘাত, জিম্মি অবস্থা এবং ভয়াবহ প্রাণহানির পর এটি শান্তির পথে এক বহুল প্রতীক্ষিত পদক্ষেপ। আলবানিজ সব পক্ষকে পরিকল্পনার শর্তসমূহ মেনে চলার আহ্বান জানান এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘কূটনৈতিক প্রচেষ্টার’ প্রশংসা করেন। মিশর, কাতার ও তুরস্কের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া গাজার পুনর্গঠন, দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও একটি টেকসই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে এই উদ্যোগকে সমর্থন করে। অন্যদিকে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার খবরকে আমি স্বাগত জানাই। এটি একটি গভীর স্বস্তির মুহূর্ত- যা সারা বিশ্বে অনুভূত হবে, বিশেষ করে জিম্মিদের পরিবার এবং গাজার সাধারণ মানুষদের জন্য, যারা গত দুই বছরে অকল্পনীয় দুর্ভোগ সহ্য করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজের উপস্থাপক শন হ্যানিটির সঙ্গে আলোচনায় বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির এক মাস দূরে অবস্থান করছিল। এটা গাজা শান্তি পরিকল্পনার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত। তিনি বলেন, আমি যদি সেটা হতে দিতাম, (তাহলে) এই চুক্তি সম্ভব হতো না। আর যদি হতোও, সেটা একটা বিশাল আশঙ্কার ছায়ায় থাকত। কারণ তখন এক পারমাণবিক অস্ত্রধারী শত্রুভাবাপন্ন দেশকে মোকাবিলা করতে হতো। আপনারা দেখেছেন, তারা (ইরান) এই চুক্তির প্রশংসা করেছে। আমি বিশ্বাস করি ইরান ভবিষ্যতের শান্তি প্রক্রিয়াতেও ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও জানান, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন তাকে ফোন করেন, তখন বলেন- মানুষ এখন তাকে (নেতানিয়াহু) আবার পছন্দ করছে। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, মানুষ এখন আবার ইসরাইলকেও পছন্দ করছে।
ট্রাম্পের ভাষায়, সবকিছুর পেছনে এক ধরনের সৌভাগ্যও কাজ করেছে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক নেতারা হামাস-ইসরাইল শান্তি চুক্তির খবরকে ‘আশাব্যঞ্জক’ বলে মন্তব্য করেছেন। মার্কিন সিনেটর ক্রিস কুনস (দেলাওয়ার) বলেন, ট্রাম্পের ঘোষণাটি উৎসাহজনক। আশা করছি, এটি টিকে থাকবে। পেনসিলভেনিয়ার সিনেটর জন ফেটারম্যান বলেন, এই দুঃখজনক প্রাণগুলো অবশেষে হয়তো ঘরে ফিরতে পারবে। এটাই স্থায়ী শান্তির প্রথম সম্ভাবনা। কনেকটিকাটের সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল বলেন, প্রাথমিক খবরগুলো আশাব্যঞ্জক। রিপাবলিকান সিনেটর কেভিন ক্রেমার বলেন, তিনি ‘সতর্ক আশাবাদী’ এবং যোগ করেন, বাস্তবে এটি কীভাবে বাস্তবায়িত হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এদিকে, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত একটি ত্রাণ সংস্থা। তারা বিবৃতিতে জানায়, চুক্তির খবরকে স্বাগত জানাই। আমরা আশা করি এটি এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে, যা গাজার মানুষের সব ধরনের প্রয়োজন পূরণের সুযোগ দেবে।